কাছাড়ের আনারস চাষে সম্ভাবনা ও চা-শ্রমিক পুনর্বাসনে জোর
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৪ জুলাই : বরাক উপত্যকার কৃষি সম্ভাবনা ও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের প্রতি অসম সরকারের অঙ্গীকার আরও সুদৃঢ় করতে রাজ্যের মুখ্য সচিব ড. রবি কোটা তাঁর চারদিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করলেন। সোমবার সফরের শেষ দিনে তিনি কাছাড়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পৌঁছে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং কৃষক, শ্রমিক ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সফরের শুরুতেই তিনি পৌঁছান লক্ষীপুরের মার্কুলিন আনারস বাগানে। সেখানকার সবুজ আনারস ক্ষেতের মাঝে গিয়ে তিনি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যার কথা শোনেন এবং আনারস চাষে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন। কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য তিনি মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাডিশন) ও উন্নত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “শুধু মৌসুমেই নয়, সারা বছর ধরে উচ্চমানের আনারস উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে তুলে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী জেলার উৎপাদনকে একত্র করে বৃহত্তর বাজারে পৌঁছাতে হবে।”

এরপর তিনি মার আগ্রো অর্গানিক প্রোডিউসার কোম্পানি লিমিটেড-এর অফিসে যান এবং কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি জেলা প্রশাসন ও কৃষি দপ্তরকে নির্দেশ দেন যে, কাছাড় ও পার্শ্ববর্তী জেলা এবং এমনকি প্রতিবেশী রাজ্যের উৎপাদনও একত্রিত করে একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, আইএএস; জেলা কৃষি বিভাগের সঞ্চালক, ড. এ আর আহমেদ; সহকারী আয়ুক্ত লক্ষ্যজ্যোতি গগৈ, এসিএস; সিনিয়র কৃষি আধিকারিক ড. আর চক্রবর্তী ও ড. এনসি দাস, সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকেরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মার অর্গানিক প্রোডিউসার কোম্পানির চেয়ারম্যান লালপিয়েনগুলাম মার, সিইও মাখনলাল দুশাদ, বোর্ডের সদস্যবৃন্দ ও মার সুপ্রিম হাউস এবং মার স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দল, যারা নিজেদের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেন।

পরে তিনি যান শিলচর শহরের অদূরে ডলু গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরের প্রস্তাবিত স্থলের কাছে লালবাগে, যেখানে চা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য ১৭৩টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি নির্মাণকাজের অগ্রগতি খুঁটিয়ে দেখেন এবং পানীয় জল, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে খোঁজ নেন। এই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, অতিরিক্ত আয়ুক্ত, ড. খালেদা সুলতানা আহমেদ এবং সহকারী আয়ুক্ত লক্ষ্যজিত গগৈ।
চার দিনের বরাক সফরের সমাপ্তি উপলক্ষে শিলচর বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “কাছাড় জেলায় আনারস চাষ ও কৃষি-ভিত্তিক শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ যা দেখলাম, তাতে কৃষক, কৃষি কোম্পানি ও প্রশাসনের মধ্যে যে সমন্বয় গড়ে উঠেছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমরা শুধু প্রধান মৌসুমে নয়, দ্বিতীয় মৌসুম ও প্রক্রিয়াকরণেও জোর দিয়ে এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাব। একইভাবে, চা শ্রমিকদের পুনর্বাসন প্রকল্পও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে বড় একটি পদক্ষেপ, এবং তার অগ্রগতি দেখে আমি সন্তুষ্ট।”