৭৫ এ শাল পরিয়ে সম্মান জানালে বুঝতে হবে এখন সরে দাঁড়ানোর সময় : ভাগবত

১২ জুলাই : ‘৭৫ বছর বয়স মানেই বুঝে নিতে হবে সময় এসেছে সরে দাঁড়ানোর, নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার।’ সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে তোলপাড় রাজনৈতিক মহলে। সবাই ভাবতে বসেছেন, তাহলে কি এবার প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ঘণ্টা বাজল? আর এই বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসও।

শুক্রবার কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও বিষয়টি নিয়ে মোদিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘এ কেমন হোমকামিং! প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরতে না ফিরতেই আরএসএস প্রধান স্মরণ করিয়ে দিলেন, এ বছর ১৭ই সেপ্টেম্বর উনি ৭৫-এ পা দেবেন।’

সদ্য পঞ্চদেশ সফর সেরে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন। এই দিনেই তাঁর ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হতে চলেছে। অন্যদিকে, সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের জন্মদিন ১১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ মোদির ৭৬তম জন্মদিনের ছয়দিন আগেই পঁচাত্তর পূর্ণ করতে চলেছেন মোহন ভাগবত। তিনি এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা  সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এখন দু’জনেই ব্যাগ গুছিয়ে একে-অপরকে পথ দেখান।’

প্রসঙ্গত, নাগপুরে এক বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত বলেন, ‘৭৫ বছর বয়সের চাদর শরীরে জড়িয়ে নেওয়ার অর্থ, এ বার সরে গিয়ে অন্যদের কাজের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ প্রয়াত সঙ্ঘ-চিন্তাবিদ মোরোপন্ত পিঙ্গলের কথা টেনে ভাগবত এই মন্তব্য করেছিলেন। মোরোপন্তজির মতে, ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলে যদি কেউ শাল পরিয়ে সম্মান জানায়, তার মানে সেই ব্যক্তির বোঝা উচিত— সময় এসেছে সরে দাঁড়ানোর।

এই কথাটির প্রসঙ্গ টেনে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে, চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছর পূর্ণ হলেই মোদী প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন? কারণ বিজেপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলায় বহুবার শোনা গিয়েছে, ৭৫ বছর বয়সের পর অবসরের রীতি রয়েছে। কারণ, বিজেপি অতীতে ৭৫ বছর বয়সকে অবসরের সীমা হিসেবে ব্যবহার করেই লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী ও যশবন্ত সিনহাদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।

আর এই জল্পনার মাঝে বিজেপির সিনিয়র নেতাদের বয়স পর্যালোচনা করাও শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক মহল। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে আদবানির বয়স ৯৭। মুরলী মনোহর যোশীর বয়স ৯১। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রীসভায় মোদির বয়স সবচেয়ে বেশি। তিনি পঁচাত্তর পূর্ণ করতে চলেছেন। তাঁর পরেই রয়েছেন রাজনাথ সিং। গত ১০ জুলাই তিনি ৭৪ বছর পূর্ণ করেছেন। অন্য এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের বয়স এখন ৭২ বছর। নিতিন গডকড়ীর বয়স ৬৮ বছর। বয়সে অনেকটাই নবীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বয়স এখন ৬০ বছর। আগামী ২২ অক্টোবর তিনি ৬১ বছর পূর্ণ করবেন।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মোদী যদি সত্যিই ৭৫ বছরে অবসর নেন, তাহলে তাঁর জায়গায় কে অভিষিক্ত হবেন? সেই  আলোচনায় যে নামগুলি ভেসে উঠেছে, সেই দৌড়ে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, নিতিন গডকড়ী এবং অমিত শাহের মতো নেতারা।

যদিও শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ‘অন্যদের অবসরে পাঠিয়ে মোদি নিজে কি সেই নিয়ম মানবেন? শুধু প্রচার নয়, আচরণও গুরুত্বপূর্ণ। ৭৫-র নিয়মে যাঁদের অবসর দেওয়া হয়েছিল, এখনকার নেতৃত্ব কি তার ব্যতিক্রম?’ আবার তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, প্রধানমন্ত্রী বিগত দশ-এগারো বছরে কখনও আরএসএস সদর দপ্তরে যাননি। ওঁর এ যাত্রা আসলে অবসরের বার্তাই বহন করছে।’

Author

Spread the News