স্বামীজীর চিন্তাধারা নিয়েই কাজ করছে ভারত বিকাশ পরিষদ : ডাঃ সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য
ভারত বিকাশ পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ১১ জুলাই : ভারত বিকাশ পরিষদ শিলচর শাখার উদ্যোগে ১০ জুলাই শিলচরে উদযাপিত হল সংস্থার ৬৩তম প্রতিষ্ঠা দিবস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের লোচন বৈরাগী রোডস্থিত ইন্দ্রপ্রস্থ অনুষ্ঠান ভবনে সংস্থার শিলচর শাখার সভাপতি জ্যোতির্ময় দত্তের পৌরহিত্যে এ উপলক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে মূখ্য অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ সত্য রঞ্জন ভট্টাচার্য।
এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে আগ্নিক সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীরা সমবেত বন্দেমাতরম সংগীত পরিবেশন করেন। তৎপশ্চাৎ ভারত মাতা ও স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করা হয়। এদিন ভারত বিকাশ পরিষদের পক্ষ থেকে সমাজে উৎকৃষ্ট অবদানের জন্য প্রাক্তন জাতীয় তথা রাজ্যিক হকি কোচ সমর কৃষ্ণ নাথ ও শিলচর শ্মশানে শব দাহ কার্য্যে নিবেদিত ব্যক্তি লক্ষণ রবিদাসকে স্মারক সম্মাননা, উত্তরীয় ও উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। স্বাগত বক্তব্যে সংস্থার প্রজেক্ট কনভেনর তথা শিলচর শাখার প্রাক্তন সভাপতি আইনজীবি রজত ঘোষ বলেন, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ সেবার ভাবনা নিয়ে ভারত মাতার সুসস্তান, সমাজ সংস্কারক ডঃ সুরজ প্রকাশজী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা দেশপ্রেমিক লালা হংসরাজ গুপ্ত ও অন্যান্যরা ১৯৬৩ সনের ১২ই জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিনে এই সংস্থার স্থাপনা করেন। পরবর্তীকালে ১০ জুলাই ১৯৬৩ সালে এই সংস্থা সরকার দ্বারা অনুমোদন লাভ করে আর তখন থেকেই ১০ জুলাই সংস্থা তাদের স্থাপনা দিবস উদযাপন করে আসছে। তিনি বলেন, আমাদের সংস্থার উদ্দেশ্য একটাই সমাজের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র, অশিক্ষিত, সামাজিক তথা আর্থিক ভাবে দুর্বল এবং দিব্যাঙ্গদের সাহায্য করা এবং তাদেরকে সমাজের মূল শ্রোতে নিয়ে আসা। তিনি আরও বলেন ভারত বিকাশ পরিষদ ভারতকে মাতা হিসাবে বিবেচনা করে এবং ভারত মাতাকে আরাধ্য দেবী হিসাবে দেখে। স্বদেশ প্রেমের ভাবনাকে জাগ্রত করে ভারতবর্ষের ঐক্য ও অখণ্ডতা অক্ষুন্ন রেখে সমাজ সেবায় ব্রতী হয়েছে ভারত বিকাশ পরিষদ। ভারত বিকাশ পরিষদের চিন্তাধারা হলো ভারতবর্ষের সামগ্রিক বিকাশ, মন্তব্য আইনজীবি রজত ঘোষের।

প্রধান অতিথির ভাষণে বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা সমাজসবী ডাঃ সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ভারত বিকাশ পরিষদ সমাজের জন্য নিরলস ভাবে যে কাজ করে যাচ্ছে তা সত্যিকার অর্থে প্রশংসার দাবি রাখে। স্বামীজী বিবেকানন্দের আদর্শে আদর্শিত হয়ে সেবার মনোভাব নিয়েই কাজ করছে ভারত বিকাশ পরিষদ কাজেই এধরণের একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে অত্যন্ত গর্ববোধ হচ্ছে বলে জানান তিনি। ডাঃ সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য আরও বলেন, ধর্মকে রক্ষা করেই সবকিছু করতে হবে আমাদের, ধর্ম ছাড়া কোন মহৎ কাজ করা যায় না। ধর্মকে বিশ্বাস করে কাজ করলে সেবার কাজ মহৎ কাজ বলে বিবেচিত হবে। তিনি যুব প্রজন্মকে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে, নিজ বক্তব্যে সংস্থার প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক(উত্তর পূর্বাঞ্চল) অংশু কুমার রায় বলেন ভারত বিকাশ পরিষদের কার্য্যপ্রণালীকে পাঁচটি সূত্রে ভাগ করা হয়েছে তা হলো – সম্পর্ক, সহযোগ, সংস্কার, সেবা ও সমর্পণ, সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি বলেন আজকের দিনে আমরা ভারত বিকাশ পরিষদের ৬৩তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করছি এবং ভারত বিকাশ পরিষদের প্রতিষ্ঠার জন্য ড. সুরজ প্রকাশজী, লালা হংসরাজ গুপ্ত ও অন্যান্যদের বিশেষ অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন ভারত বিকাশ পরিষদের মূল লক্ষ্য ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার করা এবং সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। অংশুবাবু জানান ভারত বিকাশ পরিষদ বিকলাঙ্গ পরিষেবার উপর কাজ করছে। যাদের হাত পা নেই তাদের কৃত্রিম হাত পা, ট্রাই সাইকেল ইত্যাদি প্রদান করা হয় যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজে বাস করতে পারে। তিনি জানান সমগ্র ভারতবর্ষে ভারত বিকাশ পরিষদের শতাধিক হাসপাতাল রয়েছে সেখানে বিনামূল্যে বিকলাঙ্গদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়। কোটাতে ভারত বিকাশ পরিষদের যে হাসপাতাল রয়েছে সেখানে মুমুর্ষু রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে যাচ্ছে ভারত বিকাশ পরিষদ বলে জানান অংশুবাবু।

এদিন আমরা দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সমর কৃষ্ণ নাথ ও লক্ষণ রবিদাসকে সংবর্ধিত করি। বিশেষ করে শিলচর শ্মশান ঘাটে বছরের ৩৬৫ দিন ঝড়, বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে শব দাহের কাজে ব্রতী থেকে সমাজের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাওয়া লক্ষণ রবিদাসকে সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা সত্যিকার অর্থে আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করছি ।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন রিজিওনাল চেয়ারম্যান সম্পর্ক বিভাগ প্রদীপ বনিক। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন সংস্থার শিলচর শাখার সম্পাদক শঙ্কর বিশ্বাস। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নীলাঞ্জন পাল । উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ঈশ্বর ভাই উবাদিয়া, সঞ্জিত দেবনাথ ও অরিন্দম ভট্টাচার্য। এদিনের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন নতুন সদস্যদের সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের শপথ গ্রহণ করানো হয়, তারা হলেন অমলেন্দু দে, স্বপন পাল, সুদীপ চক্রবর্তী, পিয়াল দেব ও পিনাকপাণি দেব। নবাগতদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রদীপ বনিক। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে আগ্নিক সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীদের পরিবেশনায় আয়োজিত হয় মনোমুগ্ধকর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।