প্রয়াত প্রদীপ দেব, শেষ শোকস্তব্ধ পাথারকান্দি, পাশে মুসলিমরা
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৯ জুলাই : সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল পাথারকান্দির শ্রীপুর গ্রামে। বুধবার প্রয়াত হন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি প্রদীপ দেব। তাঁর শবদেহের সৎকারের সময় পাশে দাঁড়ালেন গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। ধর্মের বিভাজন ভুলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। শ্মশানে শবদাহ থেকে শুরু করে সমস্ত রীতিনীতি পালনেও মুসলিম প্রতিবেশীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা অনেক বছর ধরেই একসাথে বসবাস করি। দুঃখের সময়ে পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রদীপদা আমাদের সকলের আপন ছিলেন। মাত্র দুদিন আগে অর্থাৎ গত সোমবার তার একমাত্র কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠানে আমরা গ্রামের সবাই খাওয়াদাওয়া সহ মহাধুম দামে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করি। এই ঘটনা যেন সমগ্র সমাজের কাছে একটি বার্তা—ধর্ম নয়, মানবিকতাই হোক আমাদের পরিচয়।“

একজন প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পাথারকান্দি ব্লকের শ্রীপুর গ্রাম। প্রয়াত হয়েছেন শ্রীপুর গ্রামের বিশিষ্ট নাগরিক ও পাথারকান্দি সোমবায় সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক প্রদীপ দেব। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, দুই পুত্র, সদ্য বিবাহিত একমাত্র কন্যা, জামাতা, দুই ভাই সহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণমুগ্ধ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার তাঁর একমাত্র কন্যার বিয়ে মহাধুমধামে সম্পন্ন হয়। আনন্দ-উৎসবের আবহে কন্যাকে অশ্রুভরা বিদায় জানানোর পরও সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু বুধবার সকালে হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে রুটিন চেকআপের জন্য শিলচরে নিয়ে যান। তবে দুর্ভাগ্যবশত, সেখানেই দুপুর ২-৪৫ মিনিটের সময়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রদীপবাবু। তাঁর মৃত্যু সংবাদ গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা এলাকায়। সন্ধ্যায় মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয় এবং পরিচিতজনেরা ভিড় করেন শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, প্রদীপ দেবের শেষকৃত্যে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শ্রীপুরসহ আশপাশের গ্রাম থেকে বহু মুসলিম ব্যক্তি এসে শেষ শ্রদ্ধা জানান এবং শেষকৃত্যেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুসলিম প্রতিবেশীরা শুধু শোক প্রকাশ করেই থেমে থাকেননি, সক্রিয়ভাবে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছেন সম্প্রীতি এখনো বেঁচে আছে, মিশে আছে হৃদয়ে হৃদয়ে। গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, প্রদীপ দেব ছিলেন সকলের পরম আপনজন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, অসুস্থ, দুস্থ, গরীব—সবার পাশে দাঁড়িয়েছেন জীবনভর। তাঁর মৃত্যুতে শুধুমাত্র একটি পরিবার নয়, কেঁদে উঠেছে গোটা অঞ্চল। সেই রাতেই গ্রামের বাড়ির সামনে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।

হিন্দু-মুসলিম মিলনের এমন দৃশ্য যেন এক অপার বার্তা পৌঁছে দেয় সমাজে তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের পাশে দাঁড়াতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মুসলিম সম্প্রদায়সহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে প্রিয় ছিলেন।প্রদীপদা আমাদের পরিবারের মতো ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবক হারালাম। এমন মন্তব্য গ্রামের মুসলিম মানুষের। রাতেই মৃত্যুর বাড়ির সামনেই ধর্মীয় রীতি মতোই সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্য।