গ্রাম হোক বা শহর—অসহ্য তাপদাহে নাজেহাল সাধারণ মানুষ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগ আরও চরমে

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১৩ জুন : শ্রীভূমি জেলার আকাশে এখন একটুও মেঘ নেই, আর ঘরে নেই স্বস্তি। সূর্য যেন তপ্ত আগুন ছুড়ে মারছে প্রতিনিয়ত। সকাল ৮ টার পর থেকেই তাপমাত্রা ছুঁই ছুঁই করছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর দুপুর পেরোতেই যেন রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এই ভয়াবহ গরমে নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ নামিয়ে এনেছে লাগাতার লোডশেডিং। আর তার পেছনের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ চুরি ও অবৈধ সংযোগের বিস্তার একই সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই, ব্যাহত কাজকর্ম। কয়েকদিন ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের এক শান্ত ও সবুজ প্রান্ত শ্রীভূমি জেলা যেন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে এক তপ্তভূমিতে। আবহাওয়ার পারদ ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, যা এই অঞ্চলের জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক ও অস্বস্তিকর। সকাল ৯টা থেকেই রাস্তায় বের হওয়া দায়, আর দুপুরের দিকে যেন পুরো এলাকা রোদের আগুনে পুড়তে থাকে।

জেলার করিমগঞ্জ সদর গ্রাম অঞ্চলে গরমের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, শহরের দোকানপাট, বাজার, এমনকি সরকারি অফিসগুলোতেও দুপুরের পর মানুষের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিকদের কাজ একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে দুপুর ১২টার পর। তারা জানান আমরা রোজগারের জন্য সকাল সকাল বের হই, কিন্তু রোদে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কাজ বন্ধ রেখে গাছতলায় বসে থাকি।

গ্রাম হোক বা শহর—অসহ্য তাপদাহে নাজেহাল সাধারণ মানুষ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগ আরও চরমে

শুধু দিনের গরমই নয়, রাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ভোগান্তি আরও চরমে। প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, কখনও কখনও একটানা ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা গরমে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। জনৈক ব্যাক্তি বলেন রাত ১১টার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, জানালাও খোলা যায় না মশার ভয়ে। বাচ্চারা কান্না করে, ঘুম আসে না। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলেও কেউ ধরে না।

জলের সঙ্কট যেন নতুন করে এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর ও গ্রামে অনেক পাম্পে জলে উঠে না, ট্যাপ শুকিয়ে গেছে। কিছু এলাকায় এক বালতি জলের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নারীরা হাঁড়ি-বালতি নিয়ে লাইন দিচ্ছেন পাড়ার একমাত্র টিউবওয়েলে।

গ্রাম হোক বা শহর—অসহ্য তাপদাহে নাজেহাল সাধারণ মানুষ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগ আরও চরমে

বাজারিছড়ার সুমিত্রা দাস বলেন স্নান, রান্না তো দূরের কথা, খাওয়ার জলই ঠিকমতো জোগাড় হয় না। মেয়েরা ভোরবেলা উঠে লাইনে দাঁড়ায়। এটা আর সহ্য হয় না।”

চিকিৎসকদের পরামর্শ: বেশি করে পানি পান করুন, রোদে না বেরোন। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী জানিয়েছেন গরমজনিত অসুস্থতায় হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, মাথাব্যথা, জ্বর, ঘামাচি, অ্যালার্জির মতো সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ।

গ্রাম হোক বা শহর—অসহ্য তাপদাহে নাজেহাল সাধারণ মানুষ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগ আরও চরমে

এক চিকিৎসক বলেন এই তাপমাত্রা আমাদের অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক। শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন, পর্যাপ্ত জল ও ইলেকট্রোলাইট খেতে হবে।

শ্রীভূমি জেলার মানুষ এক সময় এই মৌসুমে যে স্বস্তির নিঃশ্বাস পেত, আজ তা রূপ নিয়েছে অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস জনজীবনে। প্রকৃতি কি নিজেই রুষ্ট হয়েছে, নাকি আমাদের অসচেতনতারই ফল এই আবহাওয়ার রুদ্ররূপ—তা সময় বলবে। তবে এই মুহূর্তে প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও সহমর্মিতাই পারে এই দুর্দিন সামাল দিতে।

Author

Spread the News