প্রতিষ্ঠা দিবসই হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব : দেবাশিস

জনতা কলেজের ৬১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন____

বরাক তরঙ্গ, ৮ এপ্রিল : মঙ্গলবার দক্ষিণ কাছাড়ের অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাবুগঞ্জ জনতা কলেজের ৬১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন সকাল ১০-৩০ টায় কলেজ প্রাঙ্গণে কলেজের পতাকা উত্তোলন ও পরে অনুষ্ঠানস্থলে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। যৌথ ভাবে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি মোহন সিংহ, কলেজ অধ‍্যক্ষ ড. দেবাশিস পাল, কাবুগঞ্জ লক্ষ্মীচরণ এইচএস স্কুলের অধ্যক্ষ অমলেন্দু নাথ, জনতা কলেজ প্রাক্তনী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক স্বপন শুক্লবৈদ্য প্রমুখ।

এদিন অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন বক্তা কলেজের অতীত ও বর্তমান শৈক্ষিক অবস্থান ও পরিকাঠামোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি মোহন সিংহ কলেজের সামগ্রিক উন্নয়নে এলাকার শিক্ষানুরাগী মহল, কলেজ প্রাক্তনী, কলেজের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী, ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা কামনা করেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা থাকলে আগামী দিনে জনতা কলেজকে আমরা রাজ্যের অন্যতম এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো বলে আশাবাদী তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের ভাল মানুষ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বান জানান মোহন বাবু।

এদিকে, বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যক্ষ ড. দেবাশিস পাল বলেন, এই কলেজ আমাদের পরিচয় বহন করে কেননা কলেজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে আমি নিজেকে অধ্যক্ষ হিসাবে ও ছাত্রছাত্রীরা তোমরা এই কলেজের পড়ুয়া হিসাবে পরিচয় দিতে পারছো। কাজেই আমরা যারাই কলেজের সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে জড়িত আছি সবাইকে কলেজের সার্বিক কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। দেবাশিসবাবু বলেন, আমরা সরকার দ্বারা ঘোষিত বিভিন্ন উৎসব পালন করি কিন্তু কলেজের একটা নিজস্ব উৎসব আছে আর সেটা হচ্ছে প্রতিষ্ঠা দিবস আর এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বা অনুষ্ঠান। তিনি জানান উক্ত অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথিরূপে মন্ত্রী কৌশিক রায় ও সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু বর্তমান পঞ্চায়েত নির্বাচন সহ সরকারী কাজে ব্যস্ত থাকায় তারা যদিও আসতে পারেনি তথাপি এই অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গ সুন্দর হোক এই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠা দিবসই হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব : দেবাশিস

কলেজ প্রাক্তনী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক স্বপন শুক্লবৈদ্য কাবুগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যে সকল শিক্ষানুরাগী জনগণ সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছিলেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। প্রয়াত বিনোদবিহারী নাথ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের চাকরি ছেড়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন এবং প্রয়াত রাজেন্দ্রলাল নাথ, প্রয়াত দিলীপ দেব মজুমদার, প্রয়াত সুভাষচন্দ্র নাথ, প্রয়াত সুশীলচন্দ্র দে প্রমুখ অধ্যাপক হিসাবে কাজে যোগ দেন এবং তারা নিজ সন্তানের মতো ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন বলে জানান তিনি। স্বপন শুক্লবৈদ্য আরও জানান ১৯৮৪ সালে অর্থনীতি ও বাংলা বিভাগে অনার্স ক্লাস শুরু হয় এবং এবছর অর্থনীতি বিভাগে মোট ছয়জন ছাত্রের মধ্যে পাঁচজন ছাত্র অনার্স পেয়েছিল। অনুরূপ ভাবে ১৯৮৫ সালেও অর্থনীতি বিভাগে ছয়জন ছাত্রের মধ্যে পাঁচজন অনার্স পেয়েছিল আর এই পাঁচজনের মধ্যে একজন তিনিও ছিলেন। তিনি জনতা কলেজের সেই ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ।

প্রতিষ্ঠা দিবসই হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব : দেবাশিস

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাবুগঞ্জ লক্ষ্মীচরণ এইচ এস স্কুলের অধ্যক্ষ অমলেন্দু নাথ, স্বর্ণলক্ষ্মী এইচ এস স্কুলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার নাথ, অধ্যাপক নিরেন্দ্র সিংহ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. প্রদোষ কিরণ নাথ, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. সুপ্রবীর দত্তরায়, জনতা কলেজ প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন সমারোহের আহ্বায়ক ড. ঊষা রানী শর্মা প্রমুখ। এদিন কেক কেটে ৬১ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন কলেজ পড়ুয়া ও শিক্ষিকাবৃন্দ।

এছাড়া এদিন বার্ষিক সামাজিক সমারোহ ২০২৫ এর অনুষ্ঠানে বিজয়ী এবং ছাত্র দিবসে আয়োজিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য এদিনের গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা ড. মুন্নি দেব মজুমদার। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা ড. সুদীপ্তা খেরসা।

 

Author

Spread the News