পল্টনবাজার বাংলা স্কুলের নবনির্মিত ভবন উন্মোচন শিলাদিত্যর
বরাক তরঙ্গ, ১৬ মার্চ : অসমের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলা মাধ্যেমের বিদ্যালয়গুলির অন্যতম পল্টনবাজার বাংলা স্কুলের (স্থাপিত : ১৯৩৬) নবনির্মিত ভবন উন্মোচন করলেন অসম সরকারের ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের অধ্যক্ষ শিলাদিত্য দেব। উল্লেখ্য, নতুন ভবনটি নির্মাণে তাঁর ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের নিজস্ব পুঁজি থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আবণ্টন করেছিলেন শিলাদিত্য। অবশেষে সেই টাকায় সুন্দর একটি অট্টালিকা মহানগরীর বাঙালি জনগণের হাতে তুলে দিলেন তিনি। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে পল্টনবাজার বাংলা স্কুলটি চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল। বর্ষায় ডুবে যেন স্কুলচত্বর। ভগ্নদশা ছিল চারপাশে। সেই সংকটের দিনে স্কুলশিক্ষিকা অনুরাধা পাত্রের অনুরোধে কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁকে স্কুলে নিয়ে আসেন। সেই শুরু। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ডা. রনোজ পেগু এই ঐতিহ্যমণ্ডিত স্কুলটিকে রক্ষা করার জন্য একটি শক্তিশালী সমিতি তৈরি করে দেন।যার সভাপতি রূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রাক্তন ছাত্র তথা আয়কর বিভাগের আধিকারিক অমিতাভ দে আর উপ সভাপতি ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী সহ নতুন সমিতির সদস্যরা। দেখতে দেখতে স্কুলটি ঘুরে দাঁড়ায় এবং এই মুহূর্তে অসমের বাংলা মাধ্যমের সরকারি বিদ্যালয়গুলির মধ্যে উজ্জ্বলতর একটি স্থান নি়য়েছে। শিলাদিত্য আরও বলেন, তিনি নিজেকে স্কুলের একজন প্রাক্তনী শুভানুধ্যায়ী বলেই অনুভব করেন। আগামী দিনে তাঁর পর্ষদ থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও তিনি দেন। এদিন সভাপতি অমিতাভ দে স্কুলটির উন্নয়ন যাত্রার পূর্বাপর ইতিহাস তুলে ধরেন এবং বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আগ্রহ, শিলাদিত্য দেবের সাহায্যের হাত এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র আড়াই তিন বছরে এতটা পথ আমরা পাড়ি দিতে পেরেছি। আমরা চাই আমাদের প্রিয় বিদ্যালয়টি আরও উন্নতির শিখরে উঠুক।
স্কুলের পরিচালনা সমিতির সহ সভাপতি তথা বাংলা সাহিত্য সভার সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ঐতিহ্যমণ্ডিত স্কুলটিকে বাঁচানোর জন্য অনুরাধা পাত্রের অনুরোধ, প্রাক্তন শিক্ষক বিধান দেব রায়ের উদ্যোগ শিলাদিত্য দেবের সাহায্যের হাত, দুই প্রাক্তনী অমিতাভ দে আর সঞ্জয় গুপ্তের সংযোগ~এই সব কিছু মিলে পল্টন বাজার বাংলা স্কুলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমি নিমিত্ত মাত্র।’ তিনি আরও বলেন, গোলাপ ফুল সবার জন্য, কাঁটাটা আমার জন্যে থাক। তবে গানবাজনাপ্রিয় বাঙালি হিন্দু যেন ভুলে না-যায় যে তাঁদের পূর্বপুরুষকে কাঁটাতারের তলা দিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। নিছক বিনোদনে আর কতকাল? বাংলাদেশে যখন রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙা হচ্ছিল তখন গুয়াহাটির একাংশ শিল্পী ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে’ গাইছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এই মানসিকতার শিল্পীদের ‘গানের দোকানদার’ বলেছিলেন।এরাই রে-রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেদিন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে যে হিন্দু বাঙালির তারা যদি বিনোদনেই মত্ত থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট। সংঘবদ্ধতা ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতাই মুক্তির উপায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজরানা রহমান হাজরিকা স্কুলটির পুরাতন দিন আর বর্তমান পরিবর্তনের ইতিহাস ব্যক্ত করে বলেন, আগামী দিনে আরও কিছু অভাব পূরণ করবেন শিলাদিত্য দেব এবং তার মধ্য দিয়ে পূর্ণতর ঐতিহ্যে ফিরতে পারব আমরা। উদ্বোধনী পর্বে প্রাক্তন শিক্ষক বিধান দেবরায় বলেন, পরিকাঠামো উন্নয়ন তো হল, এবারে উচিত গুণগত শিক্ষার মান বৃদ্ধি। তাতে বিদ্যার্থী বাড়বে। নবনির্মিত ভবনটির নির্মাণ-ঠিকাদার অসিত দেব সকলকে ধন্যবাদ জানান নির্মাণপর্বে সাহায্যের জন্য।
এদিন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রাক্তনীদের দ্বারা দিনব্যাপী বসন্ত উৎসবে মাতোয়ারা হন সকলে। সভায় শিলাদিত্য দেব প্রস্তাব করেন, আগামী পূজায় পল্টনবাজার স্কুলে দুর্গা পূজা নতুন করে শুরু করা হোক। একসময় স্কুল মাঠে পূজা হতো। পরে তা নিউ ফিল্ডে চলে যায়। স্কুল মাঠে মুক্তমঞ্চে শারদীয় পূজার মধ্যদিয়ে একটি বাঙালিদের একটি ‘কালচারাল হাব’ তৈরি হোক। মুহুর্মুহু করতালিতে সকলেই আশা করছেন, আগামী শরতে পল্টনবাজার বাংলা স্কুলে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে।