২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা

বরাক তরঙ্গ, ২৪ ডিসেম্বর : ‘চলো যাই ধামাইলে পা মিলাই’ -এই বাক্যকে সামনে রেখে আগামী ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে বরাক উপত্যকা ভিত্তিক সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ও রবিবার শিলচর নর্মাল স্কুল সংলগ্ন শিশু উদ্যানে সকাল দশটা থেকে দু’দিনব্যাপী বরাক উপত্যকা ভিত্তিক ৩য় ‘সমবেত ধামাইল নৃত্য প্রতিযোগিতা’ ও ২য় ‘ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা’ আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহৎ আকারে ধামাইল উৎসব আয়োজনের ওপর গুরুত্ব মন্ত্রী কৌশিক রাইয়ের

এই লোকউৎসব সুন্দর, সার্থক ও আনন্দমুখর করে তুলতে সবার উপস্থিতি ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেছে সম্মিলিত লোকমঞ্চ। মঙ্গলবার শিলচরে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে একথা জানান মঞ্চের সভাপতি ড. অনুপ কুমার রায়। এদিন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাই দাস, সহ-সভাপতি মঙ্গলা নাথ, সুপ্রদীপ দত্তরায় ও গৌতম সিনহা, প্রচার সচিব কমলেশ দাস , কোষাধ্যক্ষ ঝিমলি নাথ যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য প্রমুখকে পাশে বসিয়ে তিনি জানান, ধামাইল হলো আমাদের প্রাণের উৎসব। বরাক উপত্যকায় লোক সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণ নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করা সাংস্কৃতিক সংগঠন সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে বিগত বছরের ন্যায় এবছরও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমবেত ধামাইল ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা । গতকাল মঞ্চের এক প্রতিনিধি দল মন্ত্রী কৌশিক রায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন মন্ত্রী আগামীতে শিলচরে রাজ্য সরকারের সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে বৃহৎ আকারে ধামাইল উৎসব আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মন্ত্রী কৌশিক রায়। মন্ত্ৰী কৌশিক রায়কে আমন্ত্রণ জানাতে যাওয়ার সময় সম্মিলিত লোকমঞ্চের সদস্যদের জানান তিনি আন্তরিক ভাবে সম্মিলিত লোকমঞ্চের পাশে থাকবেন। বিগত দিনে বিহু নৃত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে আসাম সরকার, ঠিক তেমননি বরাক উপত্যকার লোক সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ ধামাইলকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মার নিকট তুলে ধরবেন। এদিন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সভাপতি অনুপ কুমার রায় বলেন, আমরা মন্ত্রী কৌশিক রাইয়ের আতিথেয়তায় অত্যন্ত খুশি ব্যক্ত করেছি। আমাদের এই প্রয়াসে মন্ত্রী কৌশিক রায় ভীষণ আন্তরিকভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং ভবিষ্যতে ধামাইল নিয়ে আমাদের এই প্রচেষ্টাকে আরো এগিয়ে নিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবিষয় তুলে ধরার যে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা মন্ত্রীর এ ধরণের ভূমিকায় অভিভূত হয়েছি এবং কৃতজ্ঞবোধ করছি। 

২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মঞ্চের সম্পাদক ভাস্কর দাস, উপ-সভাপতি সুপ্রদীপ দত্তরায় ও মঙ্গলা নাথ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস জানান, দুদিবসীয় ধামাইল উৎসবে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সহ জৈষ্ঠ্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা চাই বরাক উপত্যকার ঐতিহ্য লোক সংস্কৃতির অঙ্গ ধামাইলকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। বলেন, বিগত বছরের ন্যায় এবছরও আমরা ধামাইল উৎসবের আয়োজন করেছি এবং তার উদ্দেশ্য একটাই ধামাইলকে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় নিয়ে যাওয়া। তারজন্য আপামর বরাকবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তাঁরা। তাঁরা জানান,ধামাইল উৎসবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসাবে স্মারক সম্মাননা, শংসাপত্র সহ নগদ সাত হাজার, পাঁচ হাজার ও তিন হাজার টাকা অর্থরাশি প্রদান করা হবে। তাছাড়া ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিটি দল থেকে দুজন করে প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করবে। ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসাবে স্মারক সম্মাননা, শংসাপত্র ও নগদ পাঁচ হাজার, তিন হাজার ও দুই হাজার টাকার অর্থরাশি প্রদান করা হবে। ধামাইল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের বয়স নূন্যতম বারো বছর ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিযোগীদের বয়সের উর্দ্ধসীমা পঁচিশ বছর হতে হবে। তাঁরা আরও জানান, মঞ্চ ২৬ মে কে আন্তর্জাতিক ধামাইল দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।২৬ মে রাধারমণ দত্তের জন্মদিন। তিনি এক হাজার ধামাইল রচনা করেছেন।

২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সম্মিলিত লোকমঞ্চের উদ্যোগে ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা

তাঁরা জানান, প্রতিযোগিতায় দুজন বিচারপতি থাকবেন। এরমধ্যে একজন ধর্মনগর ও আরেক জন শিলচরের। এছাড়া বরাক উপত্যকার তিন জেলা থেকে প্রতিযোগি আসবেন। প্রত্যেক দল সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪ টি দল যোগাযোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে হোজাইর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানবেন্দ্র দত্ত চৌধুরী, সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, মন্ত্রী কৌশিক রায়, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সহ আরও বিশিষ্টজনেরা। ধামাইল উৎসবের অন্তিম দিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজীব মোহন পন্ত। এদিন সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস শিলচর শহরের বিবাহ ভবন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন তারা যেন বিবাহ অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ধামাইল নৃত্যের ছোট্ট অনুষ্ঠান রাখেন এবং প্রয়োজনে সম্মিলিত লোকমঞ্চ ধামাইল শিল্পীদের ব্যবস্থা করবে। 

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বরিষ্ঠ সদস্য দীপক নাথ, স্মৃতি দাস, গৌরীশঙ্কর নাথ, জলি শুক্লবৈদ্য, মলি চক্রবর্তী, রাজশ্রী নাথ, রূপা ভৌমিক, জুয়েল নাথ, জলসা নাথ, বেলা শুক্লবৈদ্য, সঙ্গীতা দাস প্রমুখ। 

Author

Spread the News