ময়নাতদন্তের আগে চিকিৎসকের দরদাম, টাকা না দিলে হাতই দেন না
ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী বাবা, এ ঘটনার দু’টি দেহ বাড়ি আনতে খরচ ২৫ হাজার টাকা
বরাক তরঙ্গ, ১৯ নভেম্বর : সাত বছরের ছেলেকে হত্যা করে বাবার আত্মহত্যার শিহরণকারী ঘটনার ১২দিন পর সিদানন্দ শইকিয়া সংবাদ মাধ্যমে অসমের মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বনাথ জেলার পাবদার থানা অধীন সোলেঙ্গির মৃগাঙ্ক শইকিয়া (৩২) ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার সাত বছরের ছেলে আয়ুষ্মান শইকিয়াকে হত্যা করে এবং ৮ নভেম্বর সকালে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। লোমহর্ষক ঘটনার ১২দিন পর মৃগাঙ্ক শইকিয়ার ব্যবসায়ী বাবা এবং আয়ুষ্মানের ঠাকুদা সিদানন্দ শইকিয়া বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে অসমের সরকারি ব্যবস্থায় বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা প্রকাশ করে গভীর ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বলেন, ঘটনার পর ৮ নভেম্বর, দুটি মৃতদেহের ময়নাতদন্তের নামে মোট ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাঁকে তিনি আরও বলেন, সেদিন, শোকার্ত পরিবারকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল গোহপুর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য দু’টি মৃতদেহ বিহালিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ফলস্বরূপ, কবধার থেকে বিহালির ময়নাতদন্ত কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য মোট ১৪ হাজাট টাকা ব্যয়ে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দুজনের দেহই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ময়নাতদন্তের জন্য দুটি মৃতদেহ প্রস্তুত করার আগে, চিকিৎসক নিকৃষ্ট ভাবে দরদাম শুরু করেন। সিদানন্দ শইকিয়ার মতে, ৮ নভেম্বর সেখানে দু’টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাঁর কাছ থেকে মোট ছয় হাজার টাকা নেন।
ছয় হাজার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকরা দেহতে হাত লাগাননি। শুধু তাই নয়, একটি মৃতদেহের বিনিময়ে ময়নাতদন্ত কেন্দ্রের সুইপারকে আড়াই হাজার করে দিতে হয়েছিল। মোট পাঁচ হাজার টাকা দেন।

একই দিনে, ৮ নভেম্বর ভোরে মৃগাঙ্কের মৃতদেহ তার বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নীলঘর বরিগাঁও তিনিয়ালির কাছে পাওয়া যাওয়ার ১২দিন পর গোহপুর পুলিশ মৃগাঙ্কের কাছে থাকা টিভিএস কোম্পানির এএস ৩২ এ ৩০৪৫ নম্বরের স্কুটি উদ্ধার করতে পারেনি। উল্লেখ্য, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় মৃগঙ্ক তাঁর ছেলেকে হত্যা করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
8 নভেম্বর সকালে মৃগাঙ্কের দেহটি একটি চিপ সহ পাওয়া যাওয়ার পর, স্কুটির চাবিটি তার পরিহিত লুজেন্টের কোমরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। শিদানন্দ সাইকিয়ার মতে, যে জায়গায় মৃগাঙ্ক আত্মহত্যা করেছে সেখান থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্কুটিটি রয়েছে।
তবে, গোহপুর পুলিশ আজ পর্যন্ত স্কুটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় সিদানন্দ শইকিয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলা বাহুল্য, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায়, যখন হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল, তখন গোহপুর পুলিশের এক কর্মকর্তা পৌঁছেছিলেন কিন্তু এরপর থেকে আজ অবধি তাঁর বাড়িতে আসা পুলিশ প্রয়োজনবোধ করেনি। ঘটনার কোন তদন্তও হয়নি। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
অসমের পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানের দৃষ্টি গোচর করতে সিদানন্দ শইকিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অভিযোগগুলি জনসমক্ষে আনার কারণ হল যাতে তাঁর মতো অন্যরা ভবিষ্যতে হয়রানির সম্মুখীন না হন।