কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার বিশাল গণসমাবেশ
রাজীব দে, ঢাকা।
২ নভেম্বর : ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ৪০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হল গণসমাবেশে। শনিবার গণসমাবেশে নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সকল রাজনৈতিক শক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সকল অপরাধীকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। বক্তারা সকল প্রকার ধর্মীয় বৈষম্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত সকল সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উপ-সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথের সঞ্চালনায় ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার ৮ দফা দাবিনামা এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনে ৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও। সমাবেশে জাতীয় সঙ্গীত ও গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক- এ তিন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার লোকের এ বিশাল সমাবেশ শুরু হয়। ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ৪০টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-মঠমন্দির দখল ও দখলের অপপ্রয়াস, ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে গ্রেফতার, নানান ট্যাগ লাগিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার, সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবতাকে নিয়ে কটুক্তি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষমূলক প্রচারণা এমনকি তাদের সভা-সমাবেশকে নিয়ে হুমকি আজও অব্যাহত রয়েছে। সহিংসতার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর কথিত অপরাধে ভুক্তভোগীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজনসহ পালিয়ে অনত্র আত্মগোপন করতে হচ্ছে। এহেন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তারা সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ ৪ আগস্ট পরবর্তী সকল সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি জানান। একই সাথে তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানী ও কটুক্তির প্রতিকারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে সরকারের কাছেও জোর দাবি জানিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় ৮দফায় ঘোষিত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের যথাযথ কার্যকরীকরণ, রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব ও মর্যাদা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সরকারি সকল কর্মসূচী শুরুর পূর্বে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, সংবিধান, ধর্মীয় শিক্ষায়াতন, ধর্মীয় বাজেটে বিরাজিত বৈষম্য দূরীকরণ এবং পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষা ব্যবস্থায় অসাম্প্রদায়িকতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করার দাবি জানান।
গণসমাবেশ থেকে ঐক্যমোর্চার সমন্বয়ক বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ও চিন্ময় ব্রহ্মচারীসহ সকল সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।