সম্মিলিত লোকমঞ্চের আগমনী অনুষ্ঠান শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ১ অক্টোবর : রবিবার শারদ বন্ধনায় সম্মিলিত লোকমঞ্চ দ্বারা আয়োজিত হয় আগমনী অনুষ্ঠান। শিলচর শহরের পার্ক রোডস্থিত সঙ্গীত বিদ্যালয়ে এদিন সন্ধ্যায় শুরুতে সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। পরে সম্মিলিত লোকমঞ্চের শিল্পীদের পরিবেশনায় প্রখ্যাত শিল্পী মনোরঞ্জন মালাকারের লেখা ও সুর সম্বলিত “সম্মিলিত লোকমঞ্চ প্রেমের সারি বাইয়া রে–” উদ্বোধনী গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সম্মিলিত লোকমঞ্চের সভাপতি ড. অনুপকুমার রায় বলেন, দেবীপক্ষের সূচনার প্রাকমুহূর্তে আমরা আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে আগমনী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। আগমনী অনুষ্ঠান লোকসঙ্গীতের একটি ধারা। সম্মিলিত লোকমঞ্চ লোকসংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। তিনি বলেন বরাকের লুপ্তপ্রায় লোকগান গুলিকে তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পীদের লোককণ্ঠ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গান পরিবেশন করার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে সম্মিলিত লোকমঞ্চ। লোক সংস্কৃতির প্রচার প্রসার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সম্মিলিত লোকমঞ্চের প্রয়াস জারী রয়েছে বলে জানান অনুপ বাবু। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণব ব্রহ্মচারী তার স্বাগত ভাষণে বলেন আগমনীর অর্থ আরাধনা তথা সঙ্গীতের মাধ্যমে মা দুর্গাকে আহ্বান করা। তিনি তার কলেজ জীবনে পড়াশোনার সময় শিলচর গুরুচরণ কলেজ সহ রামকৃষ্ণ মিশন রোড ঝালুপাড়ায় কিভাবে রাত জেগে আগমনী অনুষ্ঠান করতেন সেকথাগুলির স্মৃতি রোমন্থন করেন। তারা যখন ভোর তিনটের সময় আগমনী অনুষ্ঠান করতেন তখন অনুষ্ঠান আরম্ভ হওয়ার আওয়াজ শুনে মানুষ ঘুম থেকে উঠে অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন বলে জানান তিনি।
এদিনের অনুষ্ঠানে দীপা দাসগুপ্তের পরিচালনায় দীপা সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীরা পরিবেশন করেন সমবেত সংগীত। নৃত্য শিল্পী মধূমিতা ভট্টাচার্যের পরিচালনায় নৃত্যাঞ্জলি একাডেমীর শিপ্পীরা পরিবেশন করেন সমবেত নৃত্য। এছাড়াও সর্বশ্রী নাথের পরিচালনায় দুধপাতিল নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীদের পরিবেশিত সমবেত নৃত্য উপস্থিত সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়, এতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা ছিলেন ঋতুপর্ণা নাথ, রিতীকা দেবনাথ ও স্বাগতা দেবনাথ। তাছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীতা নাথ ও সোমালি নাথ। সংস্থার তরফে এদিনের আমন্ত্রিত শিল্পীদের পুষ্পস্তবক ও উত্তরীয় দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। এদিনের বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে গীতিআলেখ্য ‘আগমনী’ পরিবেশিত হয়। গীতিআলেখ্য সংকলনে ছিলেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের সহ-সভাপতি সুপ্রদীপ দত্তরায়, ভাষ্যপাঠে ছিলেন স্মৃতি দাস। গীতিআলেখ্য সহ উদ্বোধনী সঙ্গীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন পণ্ডিত অনিমেষ দেব, মঙ্গলা নাথ, গৌতম সিনহা, মনিমিতা গোস্বামী, রাজশ্রী নাথ, কল্যাণী দাম, ঝিমলি নাথ, অমিতা নাথ, শুক্লা নাথ, জয়শ্রী নাথ ও গৌরী নাথ। বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন তবলায় ভাস্কর দাস, কিবোর্ডে বিশ্বরূপ গোস্বামী, দোতারায় শ্রীবাস সুত্রধর, পার্কাসনে জলি শুক্লবৈদ্য।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নন্দিনী চক্রবর্তী, কবি আরতি দাস, সম্মিলিত লোকমঞ্চের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস, যুগ্ম সম্পাদিকা অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য, প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ, বরিষ্ঠ সদস্য দীপক নাথ, সুদর্শন ধর, সমাজসেবী শেখর গুপ্ত প্রমুখ। গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দিগ্বিজিতা নাথ। এক প্রেস বিবৃতিতে সংস্থার প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ এ খবর জানিয়েছেন।