শহরের সড়কগুলিতে নিম্নমানের কাজ, এনএইচআইডিসিএল প্রকৌশলীর কাছে সদুত্তর পায়নি মঞ্চ
বরাক তরঙ্গ, ৫ সেপ্টেম্বর : শহরের সড়কগুলিতে নিম্নমানের কাজ কেন হচ্ছে? তার খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার সোনাই রোডের এনএইচআইডিসিএল কার্যালয়ে উপস্থিত হন প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচর এর কর্মকর্তাগণ। জনগণের আন্দোলনের চাপে অসম সরকার শেষ পর্যন্ত শহরের ক্যাপিট্যাল পয়েন্ট থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সড়কটির কাজ শুরু করলেও তা যে শুধু প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে তা কারও চোখ এড়ায়নি। কোথাও পুরোনো পিচের উপর কোথাও কাদার উপর রাতের অন্ধকারে চলছে রাস্তা তৈরির কাজ। মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি ধ্রুব কুমার সাহার নেতৃত্বে এক বিশাল প্রতিনিধিদল এনএইচআইডিসিএল এর কার্যনির্বাহী বাস্তকারকে সড়কের কাজের নিম্নমানের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে কোন সদুত্তর মেলেনি। আজকের প্রতিনিধি দলে শিলচর পলিটেকনিকের প্রাক্তনীদের সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞও উপস্থিত ছিলেন যারা সড়ক নির্মাণের পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ। প্রথমে প্রকৌশলী দেওঘর আক্রমণাত্মক কথাবার্তা দিয়ে শুরু করে পরে প্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসার জবাবে বুঝে ফেলেন যে যারা এসেছেন তাদেরও সড়ক নির্মাণ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রয়েছে।
প্রতিনিধি দলের অন্যতম বিশেষজ্ঞ সুব্রত রায় বিশেষ করে প্রকৌশলীকে সড়ক নির্মাণের কোথায় কোথায় কি কি স্পেসিফিকেশনের কাজ হচ্ছে, সাবগ্রেড কি, প্ল্যান্টে পিচ মেশানোর সময় পাথরের টেম্পারেচার কত ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে এক এক করে প্রশ্ন করতে থাকেন। সুব্রত রায় সহ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের কথা শুনে প্রকৌশলী দেওঘর বুঝে যান যে তাঁরা আসল তথ্য জানতে এসেছে। তখন তিনি রক্ষণাত্মক হয়ে সমস্ত ত্রুটি খতিয়ে দেখবেন বলে প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, গুণমান ঠিক না হলে তিনি ঠিকাদারের বিল আটকে দেবেন। প্রতিনিধিরা তার এই কথাকেও চ্যালেঞ্জ করায় তিনি থমকে যান। তখন তিনি বলেন পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নাকি জানিয়েছে, রাস্তার দেড়ফুট নীচে জলের পাইপ রয়েছে। তাই বেশি খোঁড়াখুঁড়ি যাতে করা না হয় এবং ভারী রোলারও যাতে রাস্তায় চালানো না হয়। তিনি আরও বলেন, কাজের গুণগত মান বজায় রয়েছে কি না? তারা তা কাজ শেষ হলে যাচাই করবেন। এতে মঞ্চের সদস্যরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন এমনিতেই চূড়ান্ত অবহেলার শিকার শিলচর শহর। অনেক লড়াইয়ের পর সড়ক সংস্কারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। গুণগত মান বজায় না রেখে কাজ হলে পুনরায় রাস্তা ভেঙে যাবে। তখন আর টাকা বরাদ্দ হবে না। দুর্ভোগ পোয়াতে হবে জনগণকে।
মঞ্চের পক্ষ থেকে তাঁকে এও জিজ্ঞেস করা হয় যে কাজ চলাকালীন সময়ে কোনো টেকনিক্যাল এক্সপার্ট থাকেন কি না? তারও কোনও সুদুত্তর মেলেনি। বাস্তকার বলেন, এখনও কেউ যায়নি। মঞ্চের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উত্থাপন করা হয় যে এভাবে চলতে দেওয়া হবে না। বাস্তকার দেওঘর বলেন, সামনে দুর্গা পূজা তাই দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয় যে পূজার সময় ভালো রাস্তা সবাই চায় কিন্তু তার জন্য কাজের গুণগত মানের সঙ্গে কোনও ধরনের আপস করা চলবে না। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। অন্যথায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তারা শহরের নাগরিকদের আহ্বান জানান যে ঘরে না বসে রাস্তায় বেরুতে হবে তা না হলে পুনরায় দুর্ভোগ পোয়াতে হবে। এখানে দায়সারা গোছের কাজ হচ্ছে। মঞ্চের পক্ষ থেকে তাই আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১ টায় শিলচরের নরসিংটোলা ময়দানে জড়ো হয়ে মিছিলে পা মেলাতে সবাইকে আহ্বান জানানো হয়। আজকের এই কার্যসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত সহ তাদের কিছু সদস্য এবং মঞ্চের পক্ষ থেকে সাধন পুরকায়স্থ, দীপঙ্কর চন্দ, আশু পাল, প্রণব দত্ত, নিরুপম ব্যানার্জি, ফরিদুল হক লস্কর, প্রবীর রায় চৌধুরী, পার্থ প্রতিম রায়, শ্রীকান্ত ভট্টাচার্য এবং স্থানীয় নাগরিক হিসেবে আজির উদ্দিন লস্কর, রিন্টু মজুমদার প্রমুখ সহ অন্যান্যরা।