হোজাইয়ে ২০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন আজমন ফাউন্ডেশনের
বরাক তরঙ্গ, ১ আগস্ট : মাত্র পাঁচ জন কর্মী ও বাইশ জন পড়ুয়া নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করা আজমল ফাউন্ডেশন আজ দেশ-বিদেশে এক পরিচিত নাম হয়ে উঠছে। হোজাইতে ২০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন আজমন ফাউন্ডেশনের। বিগত ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই হাতেগোণা মাত্র ৫ জন কর্মী ও ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে হোজাইতে যাত্রা আরম্ভ করা আজমল ফাউন্ডেশন আজ সমস্ত দেশ ও দেশের বাহিরে এক উজ্জ্বল পরিচয় বহন করে চলেছে, তার বহু কর্মপ্রণালীর মাধ্যমে সুনাম অর্জন করে। সেই ছোট্ট থেকে মানুষের পাশে থেকে মানবসেবা করার জন্য হৃদয়ে পীড়া দিত, জোগাতো বহু স্বপ্ন হোজাইর আজমল পরিবারের প্রধান আলহাজ আজমল আলির। বাবার মতো একইভাবে মানবসেবা করার জন্য হৃদয়ে তাড়া দিত আজমল আলির সকল পুত্রদেরও, বিশেষ করে তৃতীয় পুত্র মওলানা বদরুদ্দিন আজমল এবং চতুর্থ পুত্র সিরাজুদ্দিন আজমলের। সেই সুবাদে হৃদয়ে গেঁথে রেখেছিলেন বহু স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রথমে হোজাইতে মর্কজুল মারিফ ও পরবর্তীকালে হাম হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা করে বহুদিনের গেঁথে রাখা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রয়াস আরম্ভ করেন। মনের গভীরে অসংখ্য দানা বাধা স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই আজমল ফাউন্ডেশন নামে হোজাইতে এক এনজিও-র প্রতিষ্ঠা করেন। যাত্রার প্রারম্ভ হয়েছিল মাত্র ৫ জন কর্মী দিয়ে। নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল আজমল ফাউন্ডেশনের বর্তমান ডাইরেক্টর ড° খসরুল ইসলামকে। ফাউন্ডেশনের যাত্রাপথে প্রধান যে কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিলো, এরমধ্যে অন্যতম ছিলো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের খুঁজে বের করে এনে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলা। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মাত্র ২২ জন ছাত্রকে নিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হয়।
প্রথমে প্রতিষ্ঠা করা হয় মরিয়ম আজমল উইমেন্স কলেজ (সেকেন্ডারি পর্যায়) পরবর্তীকালে মরিয়ম আজমল ডিগ্রি কলেজ ও আজমল কলেজ অব সায়েন্স, আর্টস এন্ড কমার্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর একে একে বিএড কলেজ, ল’ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এরপরও শেষ হয়নি মনের আশা আকাঙ্খা। মনের গভীরে পীড়া দিতে থাকে যেন গ্রামের অসহায় মেধাবী পড়ুয়াদের চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে আজমল সুপার ৪০ – এর যাত্রা আরম্ভ করেন। যাত্রার প্রারম্ভেই প্রথমবারেই এসে যায় ফলাফল। ২০১৮ সালে অসম উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখায় সমস্ত রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয় আজমল সুপার ৪০-এর ছাত্র অমর সিং থাপা। এতে আজমল পরিবার ও ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের মনে প্রচুর প্রেরণা যোগায়। দীর্ঘ কর্মপ্রণালী হাতে নিয়ে সুপার ৪০ – কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। আজ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নকে পূরণে এক ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছে আজমল সুপার ৪০।

আজ হোজাই ছাড়াও সুপার ৪০ শাখা বিস্তৃত হয়ে আছে ধুবড়ি, বদরপুর ও বরপেটায়। চলিত বৎসরের নিট পরীক্ষার ফলাফলে যেখানে সমস্ত আসামে ৯১৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ৬০০ এর উপরে মার্কস পেয়েছে। সেখানে আজমল সুপার ৪০ এর ৩৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী একাই ৬০০ এর উপরে মার্কস অর্জন করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে শুধু এখানেই থেমে থাকেনি আজমল ফাউন্ডেশন। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিষ্ঠা করা হয় আজমল আইএএস অ্যাকাডেমি। যার মাধ্যমেও বহু ছাত্র-ছাত্রী প্রশাসনিক সেবায় নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। চলিত বছরে আসাম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় আজমল আইএএস একাডেমি থেকে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় বসে। যার মধ্যে ৩৬ জন উত্তীর্ণ হয়। এরমধ্যে আসাম পুলিশ সার্ভিসে সমস্ত রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয় আজমল আইএএস একাডেমির ছাত্র রোহিত চৌধুরী। দীর্ঘ এই ২০ বৎসরের যাত্রাকালে শিক্ষার উন্নয়ণে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সমস্ত দেশ ও দেশের বাহিরে এক উল্লেখযোগ্য সুনাম অর্জন করেছে আজমল ফাউন্ডেশন। শিক্ষার উন্নয়ণের পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও অতুলনীয় অবদান রেখেছে ফাউন্ডেশন। বন্যা হোক অথবা শীত, গরমে এমনকি বিগত করোনাকালে কত যে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায় করেছে আজমল ফাউন্ডেশন।

এছাড়াও অসহায় রোগীদের আর্থিক দিয়ে সহায়তা করা তাদের যেন নিত্যদিনের কাজ। বছরের প্রতিটি মরসুমে রোদ হোক কিংবা বৃষ্টি হোক। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করে যাচ্ছে আজমল ফাউন্ডেশন। যাত্রার প্রারম্ভে মাত্র ৫ জন কর্মী থেকে আজ হাজারো কর্মী এবং ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী থেকে আজ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, তাছাড়া প্রথম যাত্রায় মরিয়ম আজমল কলেজ থেকে আজ শতাধিক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা তাও আসামের বিভিন্ন কোনায় কোনায় এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও বিস্তৃত হয়ে আছে। মানবসম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে সঠিক কর্মপ্রণালী বা অসহায়দের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করার কর্মই এত বিশাল বিস্তৃতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যৎতে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আজ সমস্ত বিশ্বে আজমল ফাউন্ডেশন তাঁর নিজের কর্মদক্ষতার বলয়ে নিজের পরিচয় নিজেই তুলে ধরতে পেরেছে।

বুধবার হোজাই আজমল মডার্ণ রেসিডেন্সি স্কুলের মাঠে ২০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ যথাক্রমে বিশিষ্ট সাংবাদিক মৃণাল তালুকদার, গুজরাটের ইসমাইল সিদ্দিকি, হোজাইর বিধায়ক রামকৃষ্ণ ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিজন আজমল ফাউন্ডেশনের এমনসব কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গতকালকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আজমল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মেনেজিং ট্রাস্টি মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল, ট্রাস্টি তথা বিধায়ক সিরাজুদ্দিন আজমল, আজমল আজমল সুপার ৪০ এর প্রজেক্ট হেড আব্দুল কাদির,৷ আজমল ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর ড° খসরুল ইসলাম, জেনারেল মেনেজার ড° এমআরএইচ আজাদ, মেনেজার জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মর্কজুল মারিফের ড° সামসুল হক চৌধুরী, হাম হাসপাতালের ডাঃ আল হিলাল চৌধুরী প্রমুখ। এক প্রেসবার্তায় এখবর জানিয়েছেন এ জেড এম ইকবাল খান।