শো কজের জবাব দিতে সময় চাইলেন সুজাম, বললেন ষড়যন্ত্রের শিকার
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ২০ মে : পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও শোকজের জবাব দিতে পারলেন না কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন ! দলীয় সুপ্রিমোর কাছে হোয়াটসঅ্যাপে চিঠি পাঠিয়ে সময় চেয়ে নিয়েছেন। বর্হিরাজ্যে থাকায় তিনি তার শোকজের জবাব দিতে দেরি হচ্ছে বলে নিজের মন্তব্য তুলে ধরলেন সংবাদমাধ্যমে। দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে এআইইউডিএফের কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্করের উপর শোকজ নোটিশ জারি করেছিল দল। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মানকাচারের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম সহ অন্য বিধায়করা গুয়াহাটির হাতিগাঁওস্থিত দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের দুই বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর উপর শোকজ নোটিশ জারি করে পাঁচ দিনের ভিতরে জবাব চাওয়া হয়েছিল। পাঁচদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলে বিধায়ক সুজাম উদ্দিন শোকজের জবাব দিতে পারলেন না।
সোমবার গুয়াহাটিতে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সুজাম উদ্দিন শোকজের প্রত্যুত্তর দিতে না পারার কারণ তুলে ধরে বলেন তিনি দক্ষিণ ভারতে ছিলেন। সেখানে তাঁর ছেলে মেয়ে পড়াশুনা করছে এবং ইদানীং ছেলের পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে তাই তিনি কর্ণাটকে থাকায় শোকজের জবাব দিতে পারেননি। তবে দলীয় সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমল সহ দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপ একটি চিঠি পাঠিয়ে এর সময় চেয়েছেন। তিনি আগামী তিন চারদিনের ভেতরে এর জবাব পাঠাবেন বলে জানান। বিধায়ক সুজাম ভাইরাল কল রেকডিং এর ঘটনাকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে বলেন, ভাইরাল হওয়া কল রেকডিং তাঁর নিজের নয়, এটা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ অর্থাৎ এআই-র কারসাজি। বিকৃত মনষ্কের লোক এটাকে এডিটিং করেছে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেটের বদৌলোতে এখন অনেক অ্যাপ বের হয়েছে যা মানুষের ভয়েসকে পরিবর্তন করে দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা হয়। তিনিও এই ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার পিছনে তার দলের সতীর্থ বিধায়কের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়েছেন। এই বিধায়কের নাম উল্লেখ না করে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন। রাজ্যের বাইরে থাকায় মামলা করতে দেরি হচ্ছে তবে শীঘ্রই ফিরে মামলা দায়ের করবেন। আইনের উপর তাঁর অগাধ আস্থা রয়েছে এবং তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদী বিধায়ক।
সুজাম উদ্দিন আরও বলেন, যে ছেলেটি এই কল রেকর্ড ভাইরাল করেছে তাকে একটি ঘর বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছে। তার কাছে সব তথ্য আসছে ধীরে ধীরে। সোনাইর বিধায়ক করিম উদ্দিন বড়ভূইয়া রাজনীতিতে “নিউ কামার”। ২০২১ সালে তাঁর দলে আগমন ঘটেছে । অথচ ১৯৬২ সাল থেকে রাজনীতির লিংকেজে জড়িত সুজামের পরিবার। তার বাবা প্রয়াত তজমুল আলি লস্কর কাটলিছড়ার দুই বারের বিধায়ক, তিনিও দুইবারের বিধায়ক, তার স্ত্রীও দুইবারের জেলা পরিষদ সদস্যা। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ইউডিএফ দলের সঙ্গে আছেন। এই দল থেকে দুইবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তাও কংগ্রেসের এক প্রতাপশালী মন্ত্রীকে হারিয়ে। যে দল ২০১৬ এর আগে আরও দুইবার প্রার্থী দিয়ে কাটলিছড়াকে উদ্ধার করতে পারেনি রায় পরিবারের হাত থেকে। সেই কাটলিছড়াকে উদ্ধার করেছেন প্রথমবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে। ২০২১ এর নির্বাচনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে তার বিরুদ্ধে কাটলিছড়া বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়া হয়েছে সঞ্জীব রায়কে যা ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন। বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মধ্যেও ব্যক্তিস্বার্থের পরিপেক্ষিতে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে কাটলিছড়ায় মহাজোটর প্রার্থী দেওয়া হয়েছে একমাত্র বড়ভূইয়া পদবির বিধায়কের কারসাজিতে বলে জানান। এরপরও তিনি বিজেপিকে ১২ হাজার ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত জনগণের ভালবাসার কারণে। তাই কে কি বললো তা দেখে কোন লাভ নেই। তার দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। দলের পর্যালোচনা বৈঠকের মাধ্যমে কি সিদ্ধান্ত নেবে তা সময়ে দেখা যাবে এবং সব পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে কে কি করছে। এই ঘটনার পেছনে কোন বিধায়ক ফাইনান্স করেছেন তা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মত প্রকাশ করেন সুজাম উদ্দিন। এবারের লোকসভা নির্বাচনের ৪ জুন রেজল্টের পর কোন কেন্দ্রে কতটি ভোট ইউডিএফের পক্ষে এসেছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর থেকে চিত্র পরিষ্কার হয়ে যাবে কোন বিধায়কের দলের প্রতি কতটুকু দরদ রয়েছে।