ধোয়ারবন্দে এআইডিওয়াইও’র বিক্ষোভ
বরাক তরঙ্গ, ১৩ অক্টোবর : যুব সংগঠন এআইডিওয়াইও’র সর্বভারতীয় কমিটির আহ্বানে দেশব্যাপী ভয়াবহ বেকার সমস্যার সমাধান করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি বন্ধ করা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবসের আয়োজন করে। এরই অঙ্গ হিসেবে সোমবার কাছাড় জেলার ধোয়ারবন্দ শহিদ বেদীর সামনে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। এই বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কাছাড় জেলা কমিটির সম্পাদক পরিতোষ ভট্টাচার্য এবং সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিজিৎ কুমার সিনহা। বক্তারা উল্লেখিত দাবি সমূহ আদায়ের লক্ষ্যে তীব্র যুব আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এখানে উল্লেখ্য যে আজ যুবসমাজ বেকারত্বের জ্বালায় জর্জরিত। সমগ্র যুব সমাজ বেকারত্বের কবলে পরে হাহাকার করছেন। সরকার বেকারত্বের সংকট সমাধানের জন্যে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। বরং তারা কর্পোরেট স্বার্থরক্ষাকারী পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করছে যা কর্মসংস্থান পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। বেকারত্বের পাশাপাশি দুর্নীতিও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীরা উত্তরাখণ্ডের রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহারেও হাজার হাজার যুবক কর্মসংস্থানের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। সরকারি পরিসংখ্যান মতে ২০২৩ সালে ভারতে ১০,৭৮৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন এবং উদ্বেগজনকভাবে একই সময়ে ১৪,২৩৪ জন বেকার যুবক আত্মহত্যা করেছেন। কৃষকদের আত্মহত্যার জন্য দেশের সুনাম দীর্ঘদিন ধরে ব্যাহত হয়েছে, কিন্তু এখন একটি মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক বাস্তবতা যে বেকাররা তাদের জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সালে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা দখল করেন কিন্তু গত ১১ বছরে মোদি সরকার কেবল তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়নি বরং নানা অজুহাতে বিদ্যমান চাকরি বাতিল করেছে, শূন্যপদ বাতিল করেছে, যার ফলে দেশের যুবসমাজ কার্যকরভাবে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে প্রচুর প্রচার চালাচ্ছে এবং করদাতাদের কোটি কোটি টাকা ওইসব অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনও বাস্তব ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় সব বড় আইটি সংস্থাই লক্ষ লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের চেষ্টা করছে।
বেকারত্বের ভয়াবহতা সমাজের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে আরও খারাপ করেছে, তরুণরা জীবিকা নির্বাহের জন্য অবৈধ এবং অনৈতিক উপায়ের দিকে ঝুঁকছে। আজকের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনের পথ থেকে বেকার যুবকদের বিচ্যুত করা এবং কর আদায়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজ্য সরকার মদের ঢালাও লাইসেন্স দিচ্ছ। ঐতিহাসিকভাবে, যুবসমাজ সর্বদা সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছে। ভগৎ সিং, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, চন্দ্রশেখর আজাদ এবং ক্ষুদিরাম বসুর মতো মহান শহীদরা তাদের জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। আজকের যুবসমাজকে তাদের বিপ্লবী সংগ্রাম থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বেকারত্ব থেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবেলায় আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। বেকারত্ব, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তিশালী যুব আন্দোলন গড়ে তোলা এবং শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিক্ষোভের পর জেলা আয়ুক্ত মারফত প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দ্যেশ্য তিনটি দাবি সম্বলিত স্মারকগ্রন্থ প্রেরণ করা হয়। এ দিনের বিক্ষোভে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি দিলীপ রী, সুবীর রায়, দিলীপ কালোয়ার, দেবু ঘাটোয়ার প্রমুখ।