মধ্যসহর সাংস্কৃতিক সমিতির প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী স্মরণিকা উন্মোচন
বরাক তরঙ্গ, ১২ অক্টোবর : ‘ঝুমুর হয়েছে, বিহু হয়েছে। এবার ধামাইল হবে অসমজুড়ে’—এই ঘোষণা দিয়ে মধ্যশহর সাংস্কৃতিক সমিতির প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী স্মরণিকা উন্মোচন অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন মন্ত্রী কৌশিক রায়। তাঁর কথায়, বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের উদ্যোগে আগামী বছরে অসমের প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠিত হবে উপত্যকার ধামাইল মহোৎসব। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সমগ্র অসমে পৌঁছে যাবে বরাকের লোকসংস্কৃতি।
শহরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন মধ্যসহর সাংস্কৃতিক সমিতি, যার প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯ সালে—এ বছর উদযাপন করেছে পঁচাত্তর বছর পূর্তি। সভাপতি মূলচাঁদ বৈদ-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত রবিবার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, স্মরণিকা সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ অখিল পাল, প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত কুমার বসু, সম্পাদক অভিষেক চক্রবর্তী, সহ সভাপতি অজয় চক্রবর্তী, সহ সম্পাদক শুচিব্রত নন্দী, ও স্মরণিকা সমিতির সম্পাদক তুহিন দেশমুখ্য।
অতিথি বরণে ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। মন্ত্রী কৌশিক রায়-সহ অভ্যাগতদের পশমি চাদর ও স্মারক তুলে বরণ করেন সহ সভাপতি অজয় চক্রবর্তী। সভাপতি মূলচাঁদ বৈদ প্রদান করেন সম্মানসূচক উপহার। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বিশিষ্ট শিল্পী অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর মাঙ্গলিক স্তোত্র পাঠে। অতিথিদের হাত ধরেই উন্মোচিত হয় স্মরণিকা।
সহ সভাপতি অজয় চক্রবর্তী জানান, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা আজ চারটি বিভাগে কাজ করছে—ক্রীড়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পূজা। গত ১ জানুয়ারি শোভাযাত্রার মাধ্যমে পঁচাত্তর বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সারাবছর জুড়ে ছিল বারোটি অনুষ্ঠান। তাঁর কথায়, এবার আমরা শিলচরে ‘কালচারাল ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ গঠন করছি, যা থেকে দুঃস্থদের আর্থিক সাহায্য করা হবে।
স্মরণিকা উপসমিতির সদস্য মহিতোষ (আশু) পাল জানান, স্মরণিকায় সংস্থার দীর্ঘ পঁচাত্তর বছরের পরিক্রমা ধরা হয়েছে। প্রচ্ছদে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র এঁকেছেন গণেশ নন্দী। স্মরণিকায় রয়েছে শিক্ষাবিদ উষারঞ্জন ভট্টাচার্য, তপোধীর ভট্টাচার্য, বিশ্বজ্যোতি বর্মণ, কাজল দেমতা, মণিধন সিংহ, সঞ্জীব দেব লস্কর, সুমিত্রা দত্ত, দেবাশিস দাস, ছন্দা সেন, দেবযানি ভট্টাচার্য, রতন দাস প্রমুখের লেখা—মোট ১৫টি তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ।
সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, স্বাধীনতার পর সমাজকে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই এই মধ্যসহর সাংস্কৃতিক সমিতির জন্ম। যারা সূচনা করেছিলেন, তাঁরা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁদের অবদান অমলিন।
মন্ত্রী কৌশিক রায় অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন, মধ্যশহর ওয়েলফেয়ার ফান্ডে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি আগামী অর্থবর্ষে ২০ লক্ষ টাকার অনুদান বরাদ্দ করা হবে সমিতির উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য। তাঁর বক্তব্য, সংস্থার কাজ আরও প্রসারিত হোক, এটাই আমাদের কামনা।
শেষে সভাপতি মূলচাঁদ বৈদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ যাত্রা আসলে শিলচরের সংস্কৃতির ইতিহাস। আগামী প্রজন্ম যেন এই উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে কলকাতার শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের সুরে। আর সেই সুরেই যেন শিলচরের সাংস্কৃতিক জীবনে শুরু হল নতুন অধ্যায়—বরাকের ধামাইলের তালে তালে সুর বাঁধার আয়োজন অসমজুড়ে।