জনপ্রিয়তার দিক থেকে অন্যান্য শিল্পীদের ছাড়িয়ে গেলেন জুবিন
বরাক তরঙ্গ, ২২ সেপ্টেম্বর, সোমবার,
জনপ্রিয়তার দিক থেকে অন্যান্য শিল্পীদের ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তা প্রমাণ করল শেষ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের প্রথম দিনই। এই জনসমাগম বিশ্বের চতুর্থতম সমাবেশ হিসেবে গণ্য করা হল। এই ব্যক্তি হলেন অতি সাধারণ মানুষের মনের লোক জুবিন গর্গ। এই জনপ্রিয়তার গানের পাশাপাশি ছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা। একজন সেলিব্রিটি হয়েও কোন দিনই অহঙ্কার করেননি। মঞ্চ থেকে চায়ের দোকান সবখানেই দেখা মিলেছে তাঁর। শুধু তা নয়, কৃতজ্ঞতা জানাতে কোনও কার্পণ্যতা করেননি। কৈশোর পার করা করিমগঞ্জকে ভুলেননি। অসম তথা দেশে বিভিন্ন প্রান্তে জীবনের ব্যস্তসূচির মধ্যে ঘুরছেন তখনই তিনি করিমগঞ্জে এসে বাল্যবন্ধুদের খোঁজে বের করে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন। গিয়েছেন পুরানো স্কুলেও। খাওয়াদাওয়া করেছেন বন্ধুর ঘরে। এই হলেন জুবিন।
তাঁর অকাল মৃত্যু সবাইকে নাড়া দিয়ে গেছে। কারণ, জুবিন বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা সব বয়সের মানুষের মধ্যে থাকলেও জুবিন কিন্তু যথেষ্ট প্রচারবিমুখ ছিলেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অনন্য প্রতীক। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী সঙ্গীতের পাশাপাশি সিনেমা, সাহিত্য ও সামাজিক কর্মক্ষেত্রে গভীর ছাপ রেখে গেছেন। ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ ও মানবদরদী।
গর্গ কামাখ্যা মন্দিরে পশুবলি বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। করেছিলেন প্রতিবাদ। এতে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল পশু কল্যাণ সংস্থা ‘পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যান্স’। গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দিরে পশুবলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাঁকে ‘হিরো টু অ্যানিম্যাল্স অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল পেটা।
জবিনের স্মৃতিরক্ষায়ও পদক্ষেপ করা হোক, এমন দাবি কোনও ও কোনও মহল থেকে উঠতে শুরু করেছে। এই দাবি ওঠা যথার্থ। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে, এটা আশা করা যাচ্ছে। তাঁর নামে সঙ্গীত ক্ষেত্রে কোনও পুরস্কার চালু, কোথাও তাঁর প্রতিমূর্তি স্থাপন, এমনকী তাঁর নামে কোনও সঙ্গীত বিদ্যালয় চালু করাও যেতে পারে। রাজ্য সরকারের মনোভাব থেকে অনুমান করা যাচ্ছে, হয়তো জুবিনের স্মৃতিরক্ষার্থে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তবে তাঁর স্মৃতিরক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা না হলেও জুবিন গর্গ চিরকাল বেঁচে থাকবেন সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি টিকে থাকবে সঙ্গীত জগতে চিরকাল। কারণ, প্রতিভার কোনও মৃত্যু হয় না। তিনি পার্থিব জগতে বেঁচে না থাকলেও মানুষের মনন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকবে তাঁর শিল্পকর্ম।