বিআরও-র ৬৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন
পিএনসি, নয়াদিল্লি।
৮ মে : সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও)-র ৬৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে পৌরোহিত্য করে প্রতিরক্ষা সচিব গিরিধর আরামানে দুর্গম এলাকায় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিআরও যেভাবে নিজের কাজ করে চলেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। ভাষণে প্রতিরক্ষা সচিব বলেন, সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামোগত নানা প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বিকাশে বিআরও-র অবদান অনেকখানি।
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিআরও যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নানা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে চলেছে তা এক দৃষ্টান্ত বলে প্রতিরক্ষা সচিব মনে করেন। এই ধরনের কাজে আরও গতি আনতে আধুনিকতম প্রযুক্তির প্রয়োগে জোর দেন তিনি।
সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গে ধ্বস এবং সিকিমে বন্যার সময় বিআরও-র কর্মীরা ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে যে দক্ষতার নিদর্শন রেখেছেন, তারও উল্লেখ করেন তিনি। ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ’ কর্মসূচিতে এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে প্রতিরক্ষা সচিব আশাবাদী।
অনুষ্ঠানে বিআরও-র মহানির্দেশক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রঘু শ্রীনিবাসন সংস্থার কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। ‘ইন দ্য সাইলেন্স অফ আওয়ার গ্রেট মাউন্টেন্স – ওয়ার্ক স্পিকস’ শব্দবন্ধটি বিআরও-র দায়বদ্ধতা এবং কর্মনিষ্ঠার বার্তাবাহী বলে তাঁর মন্তব্য। প্রত্যন্ত এলাকার সংযোগসাধন এবং জনসংযোগ বৃদ্ধির কর্মসূচি আরও জোরদার করার ডাক দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সেলা সুড়ঙ্গের ওপর একটি বিশদ তথ্যপঞ্জীর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সচিবের লেখা বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করা হয়। ২০২৩-২৪ বছরের জন্য কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিতে পুরস্কার প্রদানও করা হয়, সম্মানিত করা হয় সংস্থার কৃতী মহিলা কর্মীদের। সিকিমে বন্যা এবং সেলা সুড়ঙ্গে অস্থায়ী যেসব কর্মী কাজ করেছেন, তাঁদের সংবর্ধিত করা হয় এই অনুষ্ঠানে।
১৯৬০ সালে পূর্ব প্রান্তে ‘টাস্কার’ (বর্তমানে বর্তক) প্রকল্প এবং উত্তরে ‘বিকন’ প্রকল্পের রূপায়ণের দায়িত্ব নিয়ে বিআরও পথ চলা শুরু করে। এখন ১১টি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৮টি প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে বিআরও। দুর্গম ও উঁচু পার্বত্য এলাকা এবং তুষারাবৃত অঞ্চলে পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পের রূপায়ণে বিআরও নিজের দক্ষতা প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণ করেছে।
উত্তর এবং পশ্চিম সীমান্তে ৯ হাজার থেকে ১৯ হাজার ফুট উচ্চতায় সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে বিআরও। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ডে এর গুরুত্ব অনেকখানি। সীমান্তের দুর্গম অঞ্চলে ছ’দশকে ৬২,২১৪ কিলোমিটার সড়ক, ১,০০৫টি সেতু, ৭টি সুড়ঙ্গ এবং ২১টি বিমানক্ষেত্র তৈরি করেছে বিআরও। ভুটান, মায়ানমার, আফগানিস্তান এবং তাজাকিস্তানেও এই ধরনের একাধিক প্রকল্পের কাজ হয়েছে বিআরও-র তত্ত্বাবধানে।
২০২৩-২৪-এর হিসেব অনুযায়ী, মোট ৩,৬১১ কোটি টাকার ১২৫টি পরিকাঠামো প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে বিআরও-র মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে বালিপাড়া-চারদাওয়ার-তাওয়াং সড়কে সেলা সুড়ঙ্গ। সম্প্রতি ইটানগর থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এই সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খুব শীঘ্রই সিংকুন লা সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু করবে বিআরও। ১৫,৮০০ ফুট উচ্চতায় তৈরি হয়ে গেলে এই সুড়ঙ্গ হয়ে উঠবে বিশ্বের উচ্চতম সুড়ঙ্গ–ছাপিয়ে যাবে ১৫,৫৯০ ফুট উচ্চতায় গড়ে ওঠা চিনের মিলা সুড়ঙ্গকে।
বাগডোগরা এবং ব্যারাকপুরে দুটি বিমানক্ষেত্র প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে বিআরও। মুধ বিমানক্ষেত্র প্রকল্পের সম্প্রতি শিলান্যাস করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। দুটি কর্ম-মরশুমের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় বিআরও।
বিগত কয়েক বছরে বিআরও-র জন্য বাজেটে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। এর সুবাদে এই সংস্থাটির কর্মকাণ্ড আরও প্রসারিত হবে তা বলাই বাহুল্য।