গুয়াহাটিতে বাংলা সাহিত্য সভার চতুর্থ প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন
বরাক তরঙ্গ, ১৫ জুলাই : গুয়াহাটি বর্ষাপাড়ায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে বাংলা সাহিত্য সভার চতুর্থ প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপিত হয়। রবিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রথমেই সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ঝুমুর জাতীয় মিশ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর একক সত্রীয় নৃত্য পরিবেশন করে তেজস্বী কাশ্যপ।
বিশিষ্ট জনদের উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বাংলা সাহিত্য সভার রাজ্য শাখার সম্পাদক তথা কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য প্রভাষক প্রশান্ত চক্রবর্তী তাঁর ভাষণে সংস্থার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তারপর ছিল অনবদ্য উপস্থাপনা সমবেত কণ্ঠে “ও আমার দেশের মাটি” রবীন্দ্র সঙ্গীতটি। এটি পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী শিকদার। অনুষ্ঠানে ছিল বিশিষ্ট গুণীজন সংবর্ধনা, একঝাঁক সংস্থার উদ্যমী এবং নিষ্ঠাবান কর্মী সদস্যদেরও সম্মাননা। কবি, সাহিত্যিক সজল পাল রচিত ও সুরারোপিত সংস্থা গীতিও পরিবেশিত হল। এক শিশু শিল্পী খুব সুন্দর এক খানি আবৃত্তি করে কবি শঙ্খ ঘোষের “মিথ্যা কথা”। সুন্দর সমবেত রবীন্দ্র নৃত্য উপস্থাপিত হয় একাংশ কিশোরী নৃত্য শিল্পীদের প্রতিষ্ঠা দিবসে। “নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়া, সম্বৃত অম্বর” নাচটি অপূর্ব পরিবেশন করেন শিল্পী অর্পিতা দাস। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অজিত সেন আবৃত্তি করলেন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের “প্রিয়তমাসু”। সাংগঠনিক দৃঢ়তা ও একাত্মতার উপর বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন বাংলা সাহিত্য সভা আসামের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ শিশির সেনগুপ্ত এবং গুয়াহাটি শাখার কোষাধ্যক্ষ তুষারকান্তি সাহা।
এছাড়াও করিমগঞ্জের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার কবি সুচিত্রা সিংহও এদিন আসরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পাঠ করে শোনালেন স্বরচিত বাংলা কবিতা “জয় ভারতীয়ের জয়”। দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে তিনি একটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী গানও অতি মধুর কণ্ঠে পরিবেশন করে শোনান। সঙ্গে নিয়ে আসা ত্রিভাষিক ষান্মাসিক কবিতা পত্রিকা “হমাজী” (বান্ধবী)র কিছু সংখ্যা তিনি সভায় উপস্থিত অনেককেই উপহার দেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার কেন্দ্রীয় সভাপতি খগেন্দ্রচন্দ্র দাস, গুয়াহাটি শাখার সভাপতি অসীম সরকার, দেবব্রত রায় চৌধুরী, রবিশঙ্কর দত্ত, বৃষ্টিকথা, গুয়াহাটি শাখার কর্ণধার বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, মজলিশ সংলাপ- এর তুষার কান্তি সাহা, কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক বরুণ কুমার সাহা , বিশিষ্ট অনুবাদক রুনুমি শর্মা,কবি ডালিয়া সিংহ, কণ্ঠ শিল্পী মোনালিসা ভট্টাচার্য, গায়ক রাজকুমার দাস এবং আরও অনেকে। স্থানীয় শিল্পী তানিয়া কাশ্যপ দেব মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন শ্রোতাদের একখানি বাংলা আধুনিক গানে। বিশিষ্ট শিল্পী গোবিন্দ ঘোষ দুখানি অনবদ্য সংগীত পরিবেশন করেন।
সবার শেষে বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলা সাহিত্য সভার মালিগাঁওয়ের সদস্যদের দ্বারা পরিবেশিত সঙ্গীত-নৃত্যালেখ্য “সন্তান মোর মার”। সঙ্গীতে অংশ গ্রহণ করেন ডালিয়া সিংহ প্রমুখেরা। একক নৃত্য পরিবেশন করেন একজন শিল্পী। সব মিলিয়ে এক সুন্দর মনোরম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উদযাপিত হল সংস্থার তৃতীয় বার্ষিকী এবং চতুর্থ প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে। প্রথমে সকল দর্শক শ্রোতাদের হাতে ঝালমুড়ির বাটি তুলে দেওয়া হয়। প্রশান্ত চক্রবর্তী তাঁর বক্তব্য আমরা যেহেতু বাঙালি, আমরা জন্মদিনে মায়ের হাতে পায়েস খাই, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করি। কিন্তু কেক কাটি না, ফুঁ দিয়ে বাতি নিভাই না। ওইগুলো বিদেশি রীতি, আমাদের রীতি বা সংস্কৃতি নয়। তাই উপস্থিত সকলের হাতে পায়েসের বাটি তুলে দেওয়া হয়। বার বার মেয়েদের উলুধ্বনিতে সভাস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে। এছাড়াও অনবদ্য ছিল যুগ্ম সঞ্চালনা। বাংলা সাহিত্য সভার গুয়াহাটি শাখার যুগ্ম সম্পাদক জয়া নাথ এবং বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অমর চক্রবর্তী ছিলেন এদিনের সঞ্চালকের ভূমিকায়। বাংলা সাহিত্য সভার মূল উদ্দেশ্য সত্তা ও সমন্বয়ের জয়যাত্রা সাফল্যলাভ করুক, চিরঞ্জীবী হোক সংস্থা তার আদর্শ নিয়ে মাথা উঁচু করে এভাবেই এদিন উপস্থিত অনেকেই নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।