৫ বছর বয়স থেকেই গলায় সোনালি রঙের পেঁচানো রিং পরিয়ে রাখা হয়, কেন

১৫ জুলাই : নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো মানুষের গলা সাধারণত এতো লম্বা হয় না। কিন্তু ওই গ্রামের নারীদের চিত্র স্বাভাবিক চিত্রের থেকে আলাদা। তাদের গলা অদ্ভুত রকমের লম্বা। এ কারণে তাদের জিরাফ ওম্যান বা ড্রাগন ওম্যান বলে ডাকা হয়।
সুস্থ-স্বাভাবিক কোনো নারীদের গলা এতো উঁচু হয় না। ওই গ্রামকে বলা হয় ‘লং নেক উইমেন ভিলেজ’ অর্থাৎ লম্বা গলা নারীদের গ্রাম। শুনে মনে হতে পারে কোনো সিনেমা বা গল্পের কথা আলোচনা হচ্ছে, বলা হচ্ছে কাল্পনিক কোন এক জায়গার নাম। কিন্তু না! বাস্তবেই এমন গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে। থাইল্যান্ডের চিয়াং মে তে অবস্থিত এই গ্রাম। পর্যটকদের কাছে বহুল পরিচিত এ গ্রাম। লম্বা গলার ওই মহিলাদের দেখতে এবং তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে সারাবছর গ্রামে থাকে পর্যটকদের ভিড়। কারণ এতো লম্বা গলার মহিলাদের দেখা মেলে না বিশ্বের অন্য কোথাও। গলা অদ্ভুত রকমের লম্বা হওয়ায় অনেকে আবার এই মহিলাদের ‘জিরাফ ওম্যান’ বা ‘ড্রাগন ওম্যান’ও বলে থাকেন। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তবে কি এদের জন্মই ভিন্নধর্মী শারীরিক গঠন নিয়ে?

উত্তর হচ্ছে, ‘না’। জন্ম থেকেই এ সম্প্রদায়ের মহিলাদের ‘জিরাফ’ এর মতো লম্বা গলা হয় না। জন্মের সময় আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই থাকে তাদের গলা। বংশপরম্পরায় নিজেদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য রক্ষা করতেই নিজেদের গলা লম্বা করে নেন এরা নিজেরাই। এই গ্রামে কোনও কন্যার জন্ম হলে, তার ৫ বছর বয়স থেকেই গলায় সোনালি রঙের পেঁচানো রিং পরিয়ে দেয়া হয়। প্রতিবছর রিঙের প্যাঁচ বাড়তে থাকে। এভাবে একটার পর একটা রিং যোগ করা হয় ২১ বছর পর্যন্ত। এই ২১ বছরে একবারের জন্যও কিন্তু কায়েন নারীরা ওই রিং গলা থেকে খোলেন না। অর্থাৎ ৫ বছর বয়স থেকে ২১ বছর এসময়টুকুতে তারা কেউই নিজেদের গলা চোখে দেখেন না। ২১ বছর পর যখন এই রিং তাদের গলা থেকে খোলা হয়, গলায় রিংয়ের কালো দাগ বসে যায়। গলাটা দেখায়। অদ্ভুত রকমের সরু আর লম্বা।
থাইল্যান্ডের ‘লং নেক ওম্যান ভিলেজ’ এ মূলত কায়েন সম্প্রদায় মানুষরা থাকেন। কায়েন সম্প্রদায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে থাইল্যান্ডের বাসিন্দা নয়। তাদের আসল বসতি মিয়ানমারের কায়াহ জেলার লয়কাওয়ে। মিয়ানমারে সেনা-পুলিশের অত্যাচার থেকে বাঁচতে তারা থাইল্যান্ডের উত্তরে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মে’র ওই উদ্বাস্তু শিবিরই ক্রমে কায়েন সম্প্রদায়ের নাম অনুসারে কায়েন গ্রাম হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। থাইল্যান্ড সরকার যখন কায়েনদের লম্বা গলার কথা শোনে, দেশের পর্যটন ব্যবসার উন্নতির পরিকল্পনা করে তাদের ভিসা দিয়ে দেয়। তারপর থেকে কায়েনরা ওই গ্রামেই স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। প্রচলিত রয়েছে যে, মিয়ানমারের কায়াহ জেলায় আগে অনেক বাঘ ছিল। তখন নিজেদের রক্ষা করতেই গলা, হাত, পা, কোমর ইত্যাদি জায়গায় এই শক্ত রিং তারা পরতেন। ক্রমে সেটা ঐতিহ্যে পরিণত
হয়েছে।

Author

Spread the News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *