বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে সচেষ্ট হতে আহ্বান ইন্ডিয়া মার্চ ফর সায়েন্সের

বরাক তরঙ্গ, ১১ আগস্ট : ইন্ডিয়া মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চাপ্টারের আহ্বানে শিলচরের রাঙ্গিরখাড়িস্থিত ভাষা শহিদ বেদীর পাদদেশ থেকে অম্বিকাপট্টি পর্যন্ত বিজ্ঞান প্রেমী জনসাধারণ একটি মিছিলের মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে সচেষ্ট হতে আহ্বান জানান। সংগঠনের শিলচর চাপ্টারের আহ্বায়ক কৃষাণু ভট্টাচার্য মিছিলের সূচনায় বলেন ২০১৭ সাল থেকে গোটা বিশ্বের বৈজ্ঞানিক ও বিজ্ঞান প্রেমী জনসাধারণ বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তা, ভাবনাকে উর্দ্ধে তুলে ধরার সংকল্প নিয়ে মার্চ ফর সায়েন্স এর আয়োজন করে চলেছে। ভারতেও ‘ইন্ডিয়া মার্চ ফর সায়েন্স’ – আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯ আগষ্ট তারিখে বৈজ্ঞানিক, ধৰ্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্ৰিক, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী মানুষ পথে নেমে বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ে তোলা ও অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের বিরূদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।
কিন্তু ২০২০ ও ২০২১ সালের কোভিড মহামারি মারাত্মক প্রভাব বিস্তারের ফলে পথ চলার পরিবর্তে অনলাইনের মাধ্যমে নিজেদের মতামতকে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।

প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীপঙ্কর চন্দ বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই ভারতের বিজ্ঞান প্রেমী জনসাধারণ দাবি জানিয়ে আসছেন ভারতের সংবিধানের ৫১( ক) ধারা অনুযায়ি বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ে তোলা ও অন্ধবিশ্বাস নির্মুলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ চালুর নামে জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ এর মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে মধ্যযুগীয় সামন্তীয়  কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন ১৯৬৮ সালেই কেন্দ্র সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে দেশের জি ডি পি’র ১০ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং ৩ শতাংশ গবেষণা খাতে খরচ করা হবে। বর্তমানে মাত্র জিডপি’র ০.৮ শতাংশ গবেষণা খাতে খরচ হচ্ছে। হিউম্যান সায়েন্স ফোরামের ফারুক লস্কর বলেন, বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা সরকারি সাহায্যের অভাবে ক্রমশ কমে যাচ্ছে এবং ভারতের অবস্থান বিশ্বের গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। দেশের বর্তমান সরকার মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রয়োজনে গবেষণা খাতে খরচ কমিয়ে অবৈজ্ঞানিক, যুক্তিহীন বিষয়ের পাঠ্যক্রম চালু ও গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ করছে।

বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে সচেষ্ট হতে আহ্বান ইন্ডিয়া মার্চ ফর সায়েন্সের

অরিন্দম দেব বলেন, বিশ্বের পরিবেশ বৈজ্ঞানিকরা বিশ্ব উষ্ণায়ণ, আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে যখন খুব উদ্বিগ্ন তখন সরকারের অবহেলা ও উদাসীনতার আমাদের দেশ বিশ্বের ১৮০ দেশের মধ্যে চালানো ‘এনভায়রেনমেন্ট পারফরমেন্স ইন্ডেক্সে’ ১৮০ তম স্থানে রয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ এ অন্তর্ভুক্ত ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ চালুর নামে শিক্ষাঙ্গনে বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তার পরিপন্থী ভাবনাকে ঢুকিয়ে দেওয়া চলবে না। জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ ও রাজ্য সরকারের বাজেটের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করতে হবে। জাতীয় আয়ের ৩ শতাংশ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে খরচ করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের স্বার্থে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদ ধ্বংস করা চলবে না। বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে ইত্যাদি দাবি।  ‘মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চাপ্টার’র এই মিছিলে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ড. পরিতোষ চন্দ্র দত্ত, সুব্রত চন্দ্র নাথ, দীপক সেনগুপ্ত, ভবতোষ চক্রবর্তী, তপোজ্যতি ভট্টাচার্য, সুকল্পা দত্ত, হানিফ আহমেদ বড়ভূইয়া, হিল্লোল ভট্টাচার্য, মধুমিতা দেব, রাহুল রায়, আদিমা মজুমদার, প্রজ্ঞা অন্বেষা, বিবেক আচার্য সহ ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি, শিলচর চাপ্টার, পিপলস্ সায়েন্স সোসাইটি, হিউম্যান সায়েন্স ফোরাম, আরণ্যক, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।

Author

Spread the News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *