ধর্ষণ ছাড়া কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্তকে ‘আমৃত্যু’ কারাদণ্ড দিতে পারে না নিম্ন আদালত

৯ এপ্রিল : ধর্ষণ ছাড়া আর কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্তকে ‘আমৃত্যু’ কারাদণ্ড দিতে পারবে না নিম্ন আদালত। এমনই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েকের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড বদল করে আমৃত্যু কারাদণ্ড একমাত্র উচ্চ আদালতই দিতে পারে। রাজ্যের সব বিচারবিভাগীয় অফিসারকে এই রায় পাঠিয়ে দিতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে রায় প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও নিম্ন আদালত এমন ভুল না করে।
যে নিম্ন আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়, তা তমলুকের। খুন ও অস্ত্র আইনে একটি মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিল তমলুক আদালত। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সাজাপ্রাপ্তরা।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ না করে শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টই পারে মৃত্যুদণ্ডের বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে। বেঞ্চের মতে, তমলুক আদালতের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ ভুল। তদন্ত ও শুনানি চলাকালীন যে সময়কাল আসামি বন্দি ছিল, সেই সময়কাল তার সাজা থেকে বাদ যাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।

পুলিসের বয়ান অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর মা ও স্ত্রীকে নিয়ে দীঘা যাওয়ার জন্য মণিরুল জনৈক সঞ্জয় মণ্ডলের গাড়ি ভাড়া করে। সন্ধ্যায় এক মহিলাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সে গাড়িতে ওঠে। জাইরুল বসে গাড়িচালক সঞ্জয়ের পাশে। কোলাঘাটে রাতের খাবার খেয়ে গাড়ি ছাড়ে। ১৫-২০ মিনিট পরে পিছনের আসনে ঝামেলা শুরু হয়। কোনও কিছুর সংস্পর্শে এসে সেই সময় সঞ্জয়ের চোখ ও হাতে জ্বলুনি শুরু হয়। কিছু বোঝার আগে জাইরুল তাঁর পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে এগিয়ে যেতে বলে। একটি হোটেলের কাছে এসে কোনওমতে গাড়ি থামিয়ে সঞ্জয় পালিয়ে যান। চম্পট দেয় মণিরুল ও জাইরুলও। পরে পুলিস এসে গাড়ি থেকে অ্যাসিড দগ্ধ মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে। মেলে একটি আগ্নেয়াস্ত্র। তদন্ত শেষে পুলিস গ্রেফতার করে মণিরুল ও জাইরুলকে।
তমলুক আদালত এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৫ ও ২৬ আগস্ট সাজা ঘোষণা করেছিল। মণিরুলকে আমৃত্যু ও জাইরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি মণিরুলকে ৪৫ ধারাতেও সাজা দেয় তমলুক আদালত। তার অর্থ আমৃত্যু তাকে সংশোধনাগারেই থাকতে হবে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, সিআরপিসির ৪৩৩-এর ক ধারা অনুযায়ী কোনও নিম্ন আদালত খুনের মামলায় ওই ধারায় সাজা দিতে পারে না। এর উল্লেখ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মণিরুলের সাজা বদল করেছে। তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

Author

Spread the News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *