“সায়ন্তন”-এর মতো অকাল মৃত্যু ঠেকাতে শিলচরে যাত্রা কার্ডিয়াক অব ইন্সটিটিউট সায়েন্সের
এনজিওগ্রাফি, এনজিও প্লাস্টির পরিসেবা শুরু শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ২ এপ্রিল : বরাক উপত্যকায় অনেক “সায়ন্তন” অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। সুবিধাযুক্ত স্থান অথবা দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগের অভাবে প্রায়ই এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। হৃদ যন্ত্রের কোন ব্যাঘাত ঘটলে এতোদঞ্চলের মানুষের শিলংয়ের নিগ্রিমস, গুয়াহাটির বিভিন্ন হাসপাতাল অথবা কোলকাতা কিংবা ব্যঙ্গালোরুর উপর নির্ভর করতে হতো। তবে এই নির্ভরতার সুযোগ পাওয়া যেমন ব্যয় সাপেক্ষ ঠিক সেভাবে সময়ের এক বিরাট ব্যাপার ছিল। এরজন্য এখানকার কত যে মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। এর সাক্ষী বরাক উপত্যকার সর্বস্তরের জনতা। সামান্য এনজিওগ্রাফি বা এনজিও প্লাস্টির কোন সুবিধা না থাকাতে এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছিল এখানকার মানুষদের । সায়ন্তন রায় নামের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতময়ী যুবক যখন এই হার্টের রোগে মারা যায়। তখন সাধারণ থেকে রাজনৈতিক মহলে একটা আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা থেকে উত্তরণের পথে এখন বরাকের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
সোমবার সাংবাদিকদের ডেকে এ সংক্রান্ত সুখবর শোনালেন শিলচরের তিন বেসরকারি হাসপাতাল যথাক্রমে গ্রিনহিলস, সাউথসিটি ও ভ্যালি হাসপাতালের কর্ণধার। তারা সম্মিলিতভাবে এই সেবা প্রদানে বরাকের মানুষদের জন্য এগিয়েছেন। তৈরী করেছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ “ত্রিদেব কার্ডিয়াক ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সেস। ঠিকানা শিলচর শহর ও মেডিক্যাল কলেজ মধ্যবর্তী স্থান মেহেরপুর বেলতলা। যে স্থানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাথল্যব সহ আনুসাঙ্গিক সাজ সরঞ্জাম। কেবল যে ক্যাথ্ল্যাব বসিয়েছেন তাও নয়, রবিবার সন্ধ্যা ৫-২৭ মিনিটে তারা প্রথম ইমরানা সুলতানা নামের জনৈকা রোগীর প্রথমে এনজিওগ্রাফি ও পরে এনজিওপ্লাস্টি কৃতিত্বের সঙ্গে করিয়েছেন। রবিবার এবং সোমবার মিলে তারা মোট ৬ জনের এনজিওগ্রাফি এবং এনজিওপ্লাস্টি করিয়েছেন। এই উপরোক্ত বিষয়ে প্রথমে বিস্তর উপস্থাপন করেন কার্ডিয়াক ইন্সটিটিউট সায়েন্সেস সহযোগী সাউথ সিটির কর্ণধার নিলাভ মৃদুল মজুমদার। তিনি তাঁর প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের পরিসরে বলেন, এখন তারা বাইরে থেকে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং টেকনিসিয়ান এনে কাজ শুরু করেছেন। ফলে চিকিৎসার ব্যয়ভার একটু বেশী হলেও তা বহন যোগ্য। দেড় থেকে পৌনে দু’লক্ষ টাকার মধ্যে এখন খরচা পড়ছে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পেলে সেটা সাধারণদের জন্য আরো সুবিধার হবে।
গ্রিন হিলস কর্ণধার এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম রূপকার রুদ্রনারায়ন গুপ্ত জানান, আপাতত ১৫ সিট দিয়ে তাদের এই প্রতিষ্টানের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ১৫টি সিট আবার আইসিইউ পরিষেবাযুক্ত। তিনি বলেন, এটা প্রকৃতই বরাকের এক সফল চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস। কোভিডের জন্য এই কাজে কিছুটা দেরী হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক সুচনায়। প্রতিষ্টানের পরিকাঠামো তৈরী ও সরঞ্জাম বসানোর পরই তারা এর যাত্রা শুরু করছেন। বুধবার ১১টায় রয়েছে সে অনুষ্ঠান। তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্যাথল্যব দিনে ২৫ জন রোগীর পরিসেবা দিতে সক্ষম। থাকবে ২৪ ঘন্টা দিন রাতের পরিসেবা। আগামীতে এখানে এর পরিসর বৃদ্ধি করে বাইপাস এবং ওপেন হার্ট সার্জারি করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের সামনে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন ভ্যালি হসপিটালের প্রতিনিধি সুতপা ভট্টাচার্য। তিনি এটাকে ঐতিহাসিক এক সন্ধিক্ষণ বলেও উল্লেখ করেন। এসময়ে তার সঙ্গে ছিলেন একই হাসপাতালের আরেক প্রতিনিধি নিত্যানন্দ গোয়ালাও। এদিন তারা বলেন, প্রথম এনজিওগ্রাফি ও এনজিওপ্লাস্টি করে দারুন তৃপ্ত অনুভব করেন। এসময়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরাও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী সায়ন্তন রায়ের পরিবারের সদস্যরাও।
প্রতিবেদক : ইকবাল লস্কর, শিলচর।