গণশুনানিতে শ্রমিকদের মুখের কথা শোনা হয়নি, হাততালি দিয়ে মত দিয়েছেন : মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ও সোশ্যাল হারমনি
বরাক তরঙ্গ, ২৩ জুন : হাতিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ডলু এয়ারপোর্টের পরিবেশ সমীক্ষা রিপোর্টের উপর গণশুনানি সংঘটিত করে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড। পরিবেশ রিপোর্ট ও গণশুনানি বাতিলের দাবিতে অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন, ডলু বাগানের অন্যান্য তিনটি ইউনিয়ন, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি এবং ২৪৮৬ শ্রমিকের লিখিত বক্তব্য আগেই জমা দেওয়া হয়েছিল।
সেই অনুযায়ী সোমবার জেলা আয়ুক্তের সভাপতিত্বে ও পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের মেম্বার সেক্রেটারির উপস্থিতিতে গণশুনানিতে এই লিখিত বক্তব্যের সমর্থনে জোরালো বক্তব্য পেশ করেন যথাক্রমে মৃণালকান্তি সোম, শঙ্কর ধোবি, কমলজিৎ তেলি ও অরিন্দম দেব।
২৪৮৬ জন শ্রমিকের পক্ষে যে শ্রমিকরা লিখিত বক্তব্য জমা দেন তারা সুপ্রিম কোর্টের মামলায়ও অংশীদার এবং ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি সুপ্রিম কোর্টের মামলার পিটশনারদের মধ্যে অন্যতম সংগঠন। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, এই ইআইএ রিপোর্ট বাতিল করতে হবে কারণ তা সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লঙ্ঘন করেছে। ২০২২ সালের ১২ মে ১৪৪ ধারা জারি করে জোরজবরদস্তি প্রায় ৪২ লক্ষ চারা গাছ ও হাজার হাজার ছায়া গাছ বুলডোজার লাগিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের ৬ মে ২০২৪-এর (মামলা নম্বর Civil Appeal 4603-4604 of 2024 Tapash Guha & Ors Vs. Union of India & Ors) রায় বলেছে যে চা-গাছ ও ছায়া গাছ কেটে জমি-অধিগ্রহণের আগের অবস্থায় গিয়ে সমীক্ষা করতে হবে। ইআইএ রিপোর্ট সেই আদেশকে অবজ্ঞা করেছে। উপরন্তু সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি আদেশে (WP(C) No. 1394/2023 Vanashakti Vs. Union of India) সমস্ত এক্স পোস্ট-ফ্যাক্টো নোটিফিকেশন বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। ডলুর জমি অধিগ্রহণের পর পরিবেশ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন হওয়ায় তা বাতিলযোগ্য। তাই তারা দাবি তোলেন, অধিগৃহীত জমিতে চা-গাছ ফলানোর জন্য এনরেগার মাধ্যমে কাজহারা শ্রমিকদের কাজে লাগাতে হবে।
ইউনিয়নের পক্ষের বক্তারা বলেন, চুক্তি রূপায়ণের মাধ্যমে জমি-অধিগ্রহণের ফলে কাজহারা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। এমনকি জমি অধিগ্রহণের আগে দু’টি গণশুনানিতে সব শ্রমিকরা এক বাক্যে ডলুতে এয়ারপোর্ট প্রকল্প খারিজ করেন এবং ২৩২৮ জন শ্রমিক লিখিতভাবে তা জানান, ইআইএ রিপোর্ট এব্যাপারেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। ৪২ লক্ষ চা-গাছ ও হাজারো ছায়া গাছ উপড়ে ফেলার মাধ্যমে পরিবেশের উপর প্রভাবের হিসাব, ডলু চা-বাগানের ব্যালান্স শিট ও রেভিনিউ হিসাবে যে ডলু চা-বাগান ধ্বংস হওয়ার বার্তা মেলে সেটা বাদ দিয়ে, ইআইএ রিপোর্টে চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বড়াইল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা ও ডলু লেকের উল্লেখ থাকলেও তার উপর প্রকল্পের কী প্রভাব পড়বে তার কোনও হিসেব নেই। শ্রমিকের জীবন ও জীবিকার বিপন্নতার কথা সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা এই ইআইএ রিপোর্ট বতিলের জোরদার দাবি জানান তারা।

সব বক্তাই প্রশ্ন তোলেন, এ কেমনতর গণশুনানি যা প্রজেক্ট এরিয়ার বাইরে করা হয় এবং ভুক্তভোগীদের কথা শোনা হয় না। চা-বাগান আজ খোলা রাখা হয়েছে যাতে শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করতে না পারে। এধরনের চালাকির মানে কী? প্রজেক্ট সাইটের বাইরের কতকগুলো এনজিও প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখানোর এই কৌশলকে সবাই ধিক্কার জানায়। এই এনজিওদের বক্তব্যে ইআইএ নিয়ে কোনো মতামত ছিল না, পক্ষে কোনো যুক্তিই ছিল না, তারা শুধু ইয়েসম্যানের ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ২৪৮৬ জন শ্রমিকের পক্ষে যারা গণশুনানি ও ইআইএ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তাদের মত আজকের তথাকথিত গণশুনানির ৯৫ শতাংশের মত। তাদেরকে উপক্ষা করে ডলুতে বিমান বন্দর নির্মাণের কোনো গণশুনানী হতে পারে না। এবং এই Draft EIA চূড়ান্ত হতে পারে না। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ও ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনির পক্ষে মৃণালকান্তি সোম ও অরিন্দম দেব এক প্রেসবার্তায় জানিয়েছেন।