বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করল কাছাড় জেলা প্রশাসন
জনসংযগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২০ জুন : কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কাছাড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার এক অনন্য ও হৃদয়স্পর্শী শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতিকে কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করা হয়। দিনব্যাপী আয়োজনে সাড়া জাগানো হয় তাঁর শিল্প, সংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক অবদানের প্রতি, যা আজও অসমবাসীর হৃদয়ে অনুপ্রেরণার উৎস।
দিনের সূচনা হয় এক সুরেলাভরা শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে। সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত শিলচরের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে শহরের স্থায়ী মাইক যোগে সম্প্রচারিত হয় কালজয়ী রাভা সঙ্গীত। তাঁর বিপ্লবাত্মক গানের কথা ও সুরে ভেসে উঠে অসমীয়াত্বের গৌরবগাথা ও সাংস্কৃতিক চেতনা, যা এই দিনের আবহকে করে তোলে হৃদয়গ্রাহী ও গম্ভীর।
কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর এবং সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের সহযোগিতায় সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে শুরু হয় বিশেষ ভ্রাম্যমাণ সঙ্গীতযাত্রা। সাতটি এলএসি-তে মোট সাতটি বিশেষ গাড়ি, যেগুলি মাইক সিস্টেমে সজ্জিত ছিল, প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচটি করে স্থানে রাভা সঙ্গীত পরিবেশন করে। এই গাড়িগুলিকে ঘিরে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি রাভার প্রতি জনগণের অন্তর থেকে উৎসারিত শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।

জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে সকাল সমাবেশে রাভার গান পরিবেশন করা হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুষ্ঠিত হয় রাভার জীবনের ওপর ভিত্তি করে রচনা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যার বিজয়ীদের পরবর্তীতে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশিষ্টজনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে রাভার জীবন, সংগ্রাম ও শিল্পভাবনার দিক তুলে ধরেন।

বিকেলে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের পুরাতন সম্মেলন কক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে কাছাড় জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জিলা পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিক প্রণব কুমার বরা, সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর, দীপা দাস, শিশুকল্যাণ আধিকারিক ও সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি কুমারী এবং নির্বাচন আধিকারিক ও সহকারী আয়ুক্ত মাসি টপনো।

জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিক ও অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত প্রণব কুমার বরা এই অনুষ্ঠানে এক হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে বলেন, “বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক বিপ্লবের ভাষ্যকার। তাঁর গান, নাটক, কবিতা ও রাজনীতি মানুষের বুকে আলোর দীপ জ্বালিয়েছে। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন সংস্কৃতিও হতে পারে সমাজ বদলের হাতিয়ার। আজকের দিনে আমরা শুধু তাঁকে স্মরণ করব না, বরং তাঁর আদর্শকে আমাদের কাজ, চিন্তা ও চেতনার অংশ করে তুলব।”

অনুষ্ঠানের শেষে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় নলবাড়িতে আয়োজিত রাজ্য পর্যায়ের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান, যেখানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জীবন ও আদর্শ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এইভাবে কাছাড় জেলা জুড়ে আজকের দিনটি হয়ে ওঠে শ্রদ্ধা, সংস্কৃতি ও শিক্ষামূলক উদ্যোগে ভরপুর এক স্মরণীয় ক্ষণ, যা কালাগুরুর চিরন্তন উত্তরাধিকারের প্রতি নিবেদিত এক প্রজন্মের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।