‘উনিশের ডাক’ ও ‘ছোটদের গল্প’ দুইটি গ্ৰন্থ উন্মোচন দীপায়নের
দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৩ জুন : বাংলা সাহিত্য সভা অসম শিলচর শাখার সংকলন গ্ৰন্থ ‘উনিশের ডাক’ এবং ‘ছোটদের গল্প’ দু’টি গ্ৰন্থের উন্মোচন হল। রবিবার শিলচর অম্বিকাপট্টির এক বিবাহ ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রন্থ দু’টির উন্মোচন করেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, অধ্যাপক নিরঞ্জন রায়, অসম সাহিত্য সভার অসম শিলচর শাখার সভাপতি লেখক-কবি সমর বিজয় চক্রবর্তী, বাংলাভাষা সেনানী সুনীল রায়, গ্ৰন্থটির সম্পাদক তথা কবি-লেখক ও নেতাজি সুভাষ গবেষক নীহাররঞ্জন পাল, সাংস্কৃতিক সংগঠক নিখিল পাল প্রমুখ।
এ দিন উন্মোচন অনুষ্ঠানের সূচনা হয় চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ সহ প্রঞ্চপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাভাষা সেনানী সুনীল রায় বলেন, বরাকের বাংলাভাষা শহিদদের আজও মর্যাদা পান নাই আসামের যেকোনো রাজ্য সরকারের কাছে। আজও ভারতে বরাকের বসবাসকারী বাংলাভাষীরা আজও পরাধীন বলে মন্তব্য করেন। নীহাররঞ্জন পাল ‘উনিশের ডাক’ বইটির বিভিন্ন দিক বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে বলেন, বরাকের বাংলাভাষা আন্দোলনটি সত্যিকারের অর্থে বাংলা ভাষা রক্ষার এক বলিষ্ঠ ও আত্মত্যাগের আন্দোলন। সেটি অন্য ভাষা-ভাষীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলনটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে বরাকের বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলনের নাম হলো ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে বাংলাভাষার আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, বাঙালির কোনো ধর্ম হয় না। বাঙালি মানে বাঙালিই। বাঙালিয়ানাই তার জাতিসত্তা। কিন্তু সেই বাঙালিকেই তার ইতিহাস ও চেতনা বিকৃত করে হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিতে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। সেই ফাঁদে পা-ও দিচ্ছে অনেকে। ভুলে যাচ্ছি, একুশ আর উনিশের কোনো পার্থক্য নেই। দুই জায়গাতেই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের উত্তরসূরিরাই প্রাণ দিয়েছেন। তবু বাঙালির হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করার খেলা চলছে।
মুখ্য অতিথি বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, প্রত্যেক ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রে থাকা নরেন্দ্র মোদি সরকার। বাঙালির জন্যে ১৯শে মে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রক্ত দেওয়াটাই ১৯শে মে’কে মহান করে না, রক্ত বাঙালি বহু বার দিয়েছে। বাঙালির পথ চলার ইতিহাস রক্তাক্ত অগ্রযাত্রার ইতিহাস। তাই বর্তমান
রাজ্য সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী বাংলাভাষা শহিদদের সরকারি মর্যাদা দিবেন বলে তিনি আশাবাদী। সমরবিজয় চক্রবর্তী বলেন, বাংলা সাহিত্য সভার অসমের শিলচর শাখার একটি স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করার কথা তুলে ধরেন।নিখিল পাল বলেন, ১৯শে মে বাংলা ভাষার রক্তাক্ত ইতিহাসের উজ্জ্বলতম দিনগুলোর একটি। এই দিনে এগারো জন বাঙালি প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারার অধিকারের জন্য। প্রাণ দিয়েছিলেন নিজের ভাষায় পড়তে, বলতে ও শিখতে পারার অধিকারের জন্য। পৃথিবীতে আর কোনও জাতিকে নিজের ভাষার অধিকারের জন্যে, সংষ্কৃতির অধিকারের জন্যে এতো বার, এতো বেশি রক্ত দিতে হয়নি, যতোবার দিতে হয়েছে বাঙালি জাতিকে।
অধ্যাপক নিরঞ্জন রায় বলেন, বাঙালি কখনো সবার উপরে থাকতে চায়নি, বাঙালি কখনো সবার চেয়ে আলাদাও হতে চায়নি, এমনকি দেশ ভাগের সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বাঙালির জাতিগত আচরণ ছিলো সবাইকে নিয়ে সহাবস্থানে থেকে নিজের ন্যুনতম প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করে বাঁচা। কিন্তু অনিবার্য এক জাতিগত লড়াইয়ের অনিচ্ছুক পক্ষ হয়ে উঠতে হয়েছিলো বাঙালিকে, তার জাতিগত মানচিত্রের প্রতিটি অঞ্চলেই। যে মানচিত্রের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার সঙ্গে, ভিন্ন ভিন্ন জাতির সাথে বাঙালিকে লড়তে হয়েছিলো।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুজিতকুমার দাস, পরিমল পুরকায়স্থ ও পল্লবী দাস এবং পরিচালনায় ছিলেন জয়দীপ চক্রবর্তী ও সংহিতা দত্ত চৌধুরী। সেদিন অন্যান্যদের মধ্যে বেঙ্গলি ফরোয়ার্ড ক্লাবের সদস্য ও সদস্যরা।