চাপে পড়ে উলটো সুর! মালব্য লিখলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে আজকের খ্যাতিতে পৌঁছে দিয়েছেন’
৯ আগস্ট : চাপে পড়ে উলটো সুর। বিজেপির অমিত মালব্যর জন্য শুক্রবারের পোস্টের পরে, একেবারেই অত্যুক্তি হবে না। ৪ আগস্ট যে অমিত মালব্য বলেছিলেন বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। সেই অমিত মালব্য, ঠিক হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে আজকের খ্যাতিতে পৌঁছে দিয়েছেন।’
লিখলেন, এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং দেশের একটি সরকারী ভাষা; বিশ্বব্যাপী, এটি দশটি সর্বাধিক কথ্য ভাষার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। লিখলেন? নাকি লিখতে বাধ্য হলেন? তবে নিজের পূর্ব-বক্তব্যের ভুল বুঝতে পেরে লিখলেন, নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য লিখলেন? তা বোঝা মুশকিল। তবে লিখলেন।
https://x.com/amitmalviya/status/1953695707464184290?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1953695707464184290%7Ctwgr%5E517f8beef779f95987f7367e3ca32c386b5382dd%7Ctwcon%5Es1_c10&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.aajkaal.in%2Fstory%2F56616%2Famit-malviyas-post-on-bangla-bhasha-again-wrote-perhaps-rabindranath-tagores-most-enduring-contribution-was-to-elevate-bangla-bhasha-to-the-exalted-status-it-enjoys-today-both-at-home-and-abroad
গত কয়েকদিন ধরে অমিত মালব্যর মন্তব্য নিয়ে জোর জল্পনা। রাজনীতির অলিন্দে, তার বাইরে। এর প্রেক্ষাপটও এই মুহূর্তে সবথেকে চর্চিত। রাজ্যের বাইরে, বাংলাভাষীদের উপর ক্রমাগত আক্রমণে গর্জে উঠেছে বাংলার শাসক দল, বিরোধী দল। বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের উপর অত্যাচার নিয়ে দিকে দিকে ক্ষোভের মাঝেই, আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল মালব্য-মন্তব্য। ৪ আগস্টের পোস্টে লিখেছিলেন, ‘দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে। এখানে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলতে তারা বোঝাতে চেয়েছে এমন একধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সরকারিভাষা শুধু ভিন্ন উচ্চারণেই নয়, বরং সেখানে এমন কিছু উপভাষা ব্যবহৃত হয়, যেমন সিলেটি, যা ভারতীয় বাঙালিদের কাছে কার্যত বোধগম্যই নয়’। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। ‘বাঙালি’ মূলত শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। সুতরাং দিল্লি পুলিশ যখন “বাংলাদেশি ভাষা” শব্দটি ব্যবহার করে, তখন সেটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যই। বাংলা ভাষার ভারতীয় সংস্করণ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়’।
শুধু এটুকুই নয়। তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘ধরা যাক আনন্দমঠ উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন বাংলায়, সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। বন্দে মাতরম গানটি রচিত হয়েছিল আলাদা ভাবে সংস্কৃতে এবং পরে উপন্যাসে যুক্ত হয়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন মূলত ব্রাহ্ম ধর্মীয় স্তব হিসেবে রচিত হয়েছিল, যার ভাষা ছিল সংস্কৃতায়িত বাংলা।‘
সেই পোস্টের পর, ফের অমিত মালব্যর আট আগস্টের পোস্ট। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে লম্বা পোস্টে কী লিখলেন অমিত মালব্য? লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, চিন্তা ভাবনা, কীভাবে দেশ এবং বিশ্বের মানুষকে প্রভাবিত করেছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, জন গণ মন, কীভাবে মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগত করে। তারপরেই লিখেছেন, ‘সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলা ভাষাকে আজ দেশে এবং বিদেশে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।‘
বাংলা ভাষাকে’? দিন কয়েক আগে যে ভাষার অস্তিত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই। অমিত মালব্য পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা এবং দেশের একটি সরকারী ভাষা; বিশ্বব্যাপী, এটি দশটি সর্বাধিক কথ্য ভাষার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। গদ্য এবং কবিতা উভয়ের মাধ্যমেই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে এমন একটি সাহিত্যিক সমৃদ্ধি প্রদান করেছেন যা সর্বজনীনভাবে অনুরণিত হয়। তাঁর রচিত সঙ্গীত ভাষাগত এবং ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করে – এর আবেদন কালজয়ী এবং সর্বজনীন।‘
খবর : আজকাল ডট ইন।