পঞ্চায়েতের ডিলিমিটেশনে কাটলিছড়ায় অস্তিত্বহীন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দু’টি জিপি
জিওগ্রাফিক্যাল সাদৃশ্য ছাড়াই ডিলিমিটেশনে অভিযোগ রাইজর দল ও ইউডিএফের
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ১৮ সেপ্টেম্বর : পঞ্চায়েতে ডিলিমিটেশন, কাটলিছড়া রাজস্ব সার্কলের দু’দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা অস্তিত্ব হারালো। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিলিমিটেশনের যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে কাটলিছড়া রাজস্ব সার্কলের আপিন-রংপুর এবং সাহাবাদ পঞ্চায়েত দুটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই দুই পঞ্চায়েতকে ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। জিওগ্রাফিকেল মিল না থাকা এই ডিলিমিটেশনকে মনগড়া ডিলিমিটেশন আখ্যা দিয়েছে রাইজর দল ও এআইইউডিএফ। এই ডিলিমিটেশন করা হয়েছে রীতিমতো বৈষম্যমূলক ভাবে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাইজর দল। রাইজর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর বলেন, এই ডিলিমিটেশনে জিওগ্রাফিকেল কোন সাদৃশ্য নেই। যেমন খুশী তেমন করা হয়েছে। ২লক্ষ ৭০ হাজার ভোটার থাকা আলগাপুর-কাটলিছড়া কেন্দ্রে রাখা হয়েছে দুইটি উন্নয়ন খণ্ড। অথচ হাইলাকান্দি সমষ্টিতে ৮৫ হাজার ভোট কম থাকার পরও তিনটি উন্নয়ন খণ্ড রাখা হয়েছে।এছাড়া সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পঞ্চায়েতগুলিতে ১০/১২ হাজার ভোট রাখা হয়েছে। যেখানে বিপরীতে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ৪/৫ হাজার জনসংখ্যা দিয়ে পঞ্চায়েত গঠন করা হয়েছে। ইউডিএফ এবং রাইজর দল ডিলিমিটেশনের নামে যে ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তা মেনে নিতে পারছে না। তারা এর বিরুদ্ধে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করে সম্পূর্ণ তথ্য সহ সবকিছু তুলে ধরবে রাইজর দল।
এআইইউডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হুসেন বড়ভূইয়া বলেন, এই মনগড়া ডিলিমিটেশন নিয়ে তারা শুনানিতে তথ্য ভিত্তিক সবকিছু তুলে ধরবে। যদি তাদের যুক্তিতে কোন ধরণের কর্ণপাত না করায় তাহলে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন। হাইলাকান্দি জেলায় আর কোনও পঞ্চায়েত এলাকার অস্তিত্ব হারানোর খবর এখন পর্যন্ত পর্যন্ত পাওয়া না গেলেও আপিন-রংপুর ও সাহাবাদ পঞ্চায়েতের অস্তিত্ব হারানোর খবরে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ভাবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবেন বলে চিন্তাচর্চা করছিলেন তাদের অনেকের খসড়া প্রকাশ হতেই বেকাদায় পড়ে গেছেন। শুধু তাই নয়,একটি পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামকে নবগঠিত অন্য পঞ্চায়েতে সংযুক্ত করায় গ্রামবাসীদের পক্ষেও বিরাট অসুবিধার সৃষ্টি করবে। যেমন,আপিন-রংপুর পঞ্চায়েতের রংপুর দ্বিতীয় খণ্ডকে দীননাথপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত করায় হাতের কাছের পঞ্চায়েত অফিস অনেক দূরে চলে যায়। এতে ওই গ্রামের মানুষদের ভুগান্তিতে পড়তে হবে।
সদ্য প্রকাশিত খসড়া অনুসারে জানা যায়,আপিন-রংপুর পঞ্চায়েতের রংপুর প্রথম খণ্ড,আপিন দ্বিতীয় খণ্ড গ্রাম দুটিকে রামচণ্ডী পঞ্চায়েতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পূর্বতন ওই পঞ্চায়েতের রংপুর দ্বিতীয় খণ্ডকে দীননাথপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৮-৯ হাজারের জনসংখ্যার আপিন-রংপুর পঞ্চায়েত আক্ষরিক অর্থে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
অন্যদিকে, সাহাবাদ পঞ্চায়েতের সাহাবাদ প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় খণ্ড এবং রংপুর চতুর্থ খণ্ডকে মহম্মদপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত করায় আক্ষরিক অর্থে সাহাবাদ পঞ্চায়েত অস্তিত্ব হারালো। সাহাবাদ পঞ্চায়েতেও এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চায়েতের এমন ডিলিমিটেশন মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। পাশাপাশি এলাকাগুলোকে যে ভাবে ছন্নছাড়া করা হয়েছে তাতে এলাকার উন্নয়ণ ব্যহত হবে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন জনগণ।