শ্রীভূমির পোয়ামারায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা, চ্যাম্পিয়ন নলুয়া

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১৮ জুন : শুধু খেলা নয়, এক প্রাণের উৎসব রূপ দেখা গেলো শ্রীভূমির জেলার সদরের লাঘুয়া পুয়ামার কাকড়ক নদী জলের ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে সাহস আর ঐতিহ্যের গল্প নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতায় হাজারো উৎসুক জনতার উপস্থিতিতে পোয়ামারার কাঁকড়া নদীর বুকে বুধবার বিকেল তিনটা থেকে শুরু হওয়া এক ঐতিহ্যবাহী নৌকা দৌড় প্রতিযোগিতা যেন জীবন্ত করে তুলল গ্রামীণ বাংলার চিরন্তন সংস্কৃতি, একতার বার্তা আর সহাবস্থানের সৌন্দর্য। বাইপাস সড়কজুড়ে ছিল হাজার হাজার মানুষের ঢল কেউ এসেছেন পাশের গ্রাম থেকে, কেউ বা দূরের থানা অঞ্চল থেকেও। সকলের একটাই উদ্দেশ্য চোখের সামনে দেখতে চিরাচরিত এই নৌকা বাইচ, যা শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং গ্রামবাংলার আত্মার এক অভিব্যক্তি

মেদল-শরিফনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের যুবা কমিটির উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত ওয়ার্ড সদস্য ও কমিটির সভাপতি মইনুল হক, সম্পাদক সামছুল হক এবং অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। তাদের সজাগ তত্ত্বাবধানে পুরো আয়োজনটি পরিচালিত হয় অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে।

কাঁকড়া নদীর বুকে অনুষ্ঠিত এই দৌড়ে অংশ নেয় মোট চারটি নৌকা — কিছু ছোট, কিছু দীর্ঘ, প্রতিটিই গ্রাম্য কারিগরদের হাতে তৈরি, রং-বেরঙের পতাকায় সাজানো। প্রতিটি দল ছিল ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী। দৌড় শুরু হলে নদীর বুকে বৈঠার ছন্দে যেন সুর তুলল ঢেউ, আর প্রতিধ্বনিত হলো হাজারো দর্শকের করতালি ও উল্লাসধ্বনি।

প্রথম রাউন্ডের উত্তেজনার পর দুটি নৌকা এগিয়ে আসে ফাইনালে নলুয়ার বাইশ দৌড়ের নৌকা ও কানিশাইল চুয়াটিকরের বাইশ দৌড়ের নৌকা। দু-তিনবার চূড়ান্ত রাউন্ডের চাপ দেওয়ার পর অবশেষে এক চমকপ্রদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নলুয়ার বাইশ দৌড়ের নৌকা চ্যাম্পিয়ন হয়। রীতিমতো উৎসবের আমেজে বিজয় ঘোষণা করা হয়, আর উপস্থিত জনতা বিজয়ী দলকে অভিনন্দনে ভাসিয়ে দেন।

এই প্রাণবন্ত প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার চেয়ারম্যান ইকবাল হুসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রাক্তন জিপি সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, সমাজসেবী রাজেশ মালাকার, মইন উদ্দিন, বদরুল হক সহ আরও অনেকে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ী নলুয়ার দলের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকার নগদ পুরস্কার এবং রানার-আপ কানিশাইল চুয়াটিকরের দল পায় ১০ হাজার টাকার সম্মাননা। উভয় দলকেই ক্রেস্ট, ফুল এবং অভিনন্দনের মাধ্যমে সংবর্ধিত করা হয়।