ভবিষ্যৎ সংকটে হাজার হাজার চা শ্রমিকের
দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১১ সেপ্টেম্বর : হাতিখিরা ও বিক্রমপুরের পর শিলকুড়ি চা-বাগান ধ্বংস হওয়ার পথে। ভরাখাই চা-বাগানেও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। এবার কী তাহলে টার্গেট পালোরবন্দ চা-বাগান। কয়েকদিন থেকে পালোরবন্দ চা-বাগানের যা ঘটছে তাতে অনেকেই ধারণা করছে। এক নিখুঁত ছকে একের পর এক চা-বাগানকে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এমনিতেই বরাকের চা শিল্প সংকটে। এই অবস্থায় পরপর কয়েকটি বাগান চলে যাচ্ছে বেহাতে।
কিভাবে ঘটছে ঘটনাগুলি? যেগুলো বাগানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বা যে বাগানগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগলিতে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বিরাট অংকের বকেয়া। ছয় কোটি, সাত কোটি ! এভাবে বিরাট অংকের বকেয়া রয়েছে। মালিকপক্ষ পিএফের এই টাকা মেটাতে পারছে না। তাই শেষ পর্যন্ত দেখা যায় পিএফের মধ্যস্থতায় তৃতীয় কোন পক্ষকে বাগান সমঝে দেওয়া হচ্ছে। আর কি আশ্চর্য প্রতিটি বাগানের এই দখল নিচ্ছেন পিএফের আশীর্বাদ ধন্য শর্মা পদবীর এক ব্যক্তি। আর এই সমস্ত হস্তান্তরের ব্যাপারে অত্যন্ত রহস্যজনক ভূমিকা নিয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন।
দেখা গেছে এমনভাবে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা হচ্ছে। যাতে মালিক বাধ্য হয় সব শর্ত মেনে নিতে। প্রশ্নটা হচ্ছে যদি কেউ বাগান নিতে চান দিতেই পারেন। কিন্তু তাকে বাগান চালাতে হবে তো। দেখা যাচ্ছে এই সমস্ত বাগান ভালোভাবে চলতেই পারছে না। অথচ শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে না। এখন অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন পিএফের টাকা না দিলে তো ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। খুব ভালো কথা। কিন্তু এত টাকা বকেয়া কিভাবে হয়ে গেল? প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সামান্য কিছু বাকি হলে নোটিশ দেওয়া হয়। এমনকি মালিককে আটক করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা গেল পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে অথচ মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সুযোগ দেওয়া হয়েছে বকেয়া অংকটা যাতে একটা বড় আকারের হয়। যাতে বাগাল মালিক আর সেটা দিতে না পারেন। আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে ও
দেখা গিয়েছিল অনেক বাগান মালিক গ্রেফতার হয়েছেন প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা না দেওয়ায়। কিন্তু এখন আর গ্রেফতার শোনা যায় না। গ্রেফতার বা কড়া ব্যবস্থা না করে এমন একটা জায়গায় বকেয়া নিয়ে যাওয়া হল যে মালিক সেটা দিতেই পারবে না। তখন পি এফে এর মধ্যস্থতায় নতুন মালিক হাজির করা হলো। তাকেই সমঝে দেওয়া হলো বাগান। কারও কিছু বলার থাকে না। নিখুঁত ছক।
আর এই ছকে একের পর এক বাগান ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পালোরবন্দ চা-বাগানে কিভাবে এত টাকা পিএফ বকেয়া হয়ে গেল ? তার মানে ইচ্ছাকৃতভাবে এই সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল। আর এই সমস্ত কিছুর পেছনে কলকঠি নাড়ছেন এক শ্রমিক নেতা। মালিক বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেতন রেশন দিতে পারছেন না।
স্বাভাবিকভাবে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে।
উদ্দেশ্য হলো একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে বাগান গুলোকে বেহাত করা। না হলে এক বিশেষ ব্যক্তিকে কেন বাগান গুলি সমঝে দেওয়া হয়েছে। এই চক্রের এখন পরবর্তী টার্গেট পালোরবন্দ চা-বাগান। এখানেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। মালিক তলব রেশন দিতে পারছেন না শ্রমিক অসন্তোষ চরমে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের সাত কোটি টাকা বাকি। তাই এখনেও মালিক বাধ্য হবেন আত্মসমর্পণ করতে। আর মঞ্চে প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যস্থতায় আবির্ভূত হবেন শর্মা পদবির সেই ব্যক্তিটি। এভাবেই এই ছকটি করা হয়েছে। আর এই লক্ষ্য পূরণে খুব একটা বেশি দিন বাকি নেই। এভাবে একের পর এক চা বাগান নিঃশ্বেস হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বেন হাজার হাজার চা শ্রমিক। আর পুরো বিষয়টা নিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক।