ভৈরবী-গুয়াহাটি ট্রেন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদের আশার বাণী বাস্তবে কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ জনমনে
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ২৪ জুন : আগামী ৩ জুলাই আগরতলা থেকে চালু হবে গরীবরথ এক্সপ্রেস। ত্রিপুরাবাসীর জন্য এ এক নতুন মাইলফলক।করিমগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত দুর্লভছড়া থেকেও প্রতিদিন ছুটছে গুয়াহাটিগামী ট্রেন। শুধু ভাগ্য বদলাচ্ছে না হাইলাকান্দিবাসীর। একটি দূরপাল্লার পেসেঞ্জার ট্রেনের জন্য কত যে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। ওরা তো বুলেট ট্রেন চাইছে না, চাইছে রাজ্যের রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি পেসেঞ্জার ট্রেন। দেশ ডিজিটাল হলো, বহু রাজ্যের মানুষ বুলেট ট্রেনের স্বাদও নিচ্ছেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন হয়ে গেলেও হাইলাকান্দির জনগণ দূরপাল্লার একটি পেসেঞ্জার ট্রেনের জন্য এখনও আন্দোলন করতে হচ্ছে। পাশ্ববর্তী দুই জেলার মানুষ যখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়ত করছেন রেল পরিষেবার মাধ্যমে ঠিক সে সময়ে সেই মান্ধাতা আমলের অনুন্নত যাতায়ত ব্যবস্থায় শান্তনা নিতে হচ্ছে হাইলাকান্দিবাসীকে। ভৈরবী গুয়াহাটি ট্রেন ডিমান্ড কমিটি দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছে, বারবার নেতা মন্ত্রীদের দারস্থ হয়ে তাদের সহযোগিতা কামনা করছেন, কিন্তু এতো কিছুর পরই ভৈরবী-গুয়াহাটি ট্রেন চালু হচ্ছে না। ভৈরবী -গুয়াহাটি ট্রেন নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং করিমগঞ্জের সাংসদ কৃপানাথ মালা বারবার আশার বাণী শুনালেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে কাটলিছড়ায় নির্বাচনী প্রচারে ঘোষণা দিয়েছিলেন ভবিষ্যৎ-এ ভৈরবী থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা চালু করে এক বড় ধরণের কাজ করবে রাজ্যের বিজেপি সরকার। ২১ থেকে ২৪ এর মধ্যে অনেক জল বয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ধরণের কোন রেল পরিষেবা জোটেনি হাইলাকান্দিবাসীর ভাগ্যে।ফের ২৪শের লোকসভা নির্বাচনে কাটলিছড়ায় বিজয় সংকল্প সমাবেশে একই ভাবে জনগণের কাছ থেকে জোরালো গণ আওয়াজ উঠেছিল “মামা ভৈরবী-গুয়াহাটি ট্রেন চাই” মামাও প্রত্যুত্তরে জবাব দিয়েছিলেন হয়ে যাবে ভোটের পরে। সামাজিক মাধ্যমে মামার এই ভিডিও নিয়ে এখন ট্রল চলছে। নির্বাচনের পূর্বে প্রচারে গতি বাড়াতে এবং নির্বাচিনী রণকৌশল ঠিক করতে করিমগঞ্জের সাংসদ কৃপানাথ মালা লালা শহরের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে লালার মন্দিরা মার্কেট কমপ্লেক্সে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে লালার বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে মুখ্য দাবি উঠেছিল ভৈরবী-গুয়াহাটি ট্রেন নিয়ে। এব্যাপারে আলোচনা উঠতেই বৈঠকে উপস্থিত গুণীজন সহ বিজেপি কর্মীদের আশ্বস্থ করেছিলেন সাংসদ কৃপানাথ মালা। বলেছিলেন, ট্রেন নিয়ে ভাববার কিছু নেই, ভৈরবী গুয়াহাটি ট্রেন এখন একদম হাতের নাগালে, হাইলাকান্দিবাসীর গণ দাবিকে সম্মান জানিয়ে ভৈরবী -গুয়াহাটি ট্রেনের ছাড়পত্র দিয়েছে রেল বিভাগ। কিন্তু নির্বাচনী আচরণ বিধি লাগু থাকার ফলে এই সময়ে রেল পরিষেবা চালু করা যাবে না। তবে নির্বাচন শেষে নিশ্চিত ভৈরবী গুয়াহাটি রেল পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। যা হাইলাকান্দিবাসীর জন্য এক নতুন মাইলফলক হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করবে। ভোটযুদ্ধও শেষ হলো, আদর্শ আচরণ বিধিও উঠে গেল, ফলাফলও প্রকাশ পেল, সরকারও গঠন হলো এরপরও রেল পরিষেবা চালু অনিশ্চিত হিসাবে থেকে গেলো !
২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ভৈরবী গুয়াহাটি ট্রেন ডিমান্ড কমিটির আহ্বানে প্রায় ১৮টি সংগঠন রেল পরিষেবা চালুর দাবিতে অনশন কার্যসূচীও পালন করে। কিন্তু এরপর চালু হয়নি রেল পরিষেবা। এনিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। এছাড়া জানা গেছে, বিভিন্ন সময় রেল দফতর থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে বলা হয়ে থাকে যে ভৈরবী থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত রেল চালানোর পরিকাঠামোগত কোন উন্নত সুবিধা নেই। ভৈরবী স্টেশন নাকি এর জন্য অনুপযুক্ত। যেখানে প্রতিদিন একটি করে পেসেঞ্জার ট্রেন সহ মালবাহী ট্রেন ভৈরবীতে আসা যাওয়া করছে।বলতে গেলে দুর্লভছড়া থেকে ভৈরবী স্টেশনের পরিকাঠামো আর বেশি উন্নত। জনগণ এব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, দুর্লভছড়া সাংসদ কৃপানাথ মালার হোম জিপি হওয়ার জন্য সেখানে থেকে ট্রেন চালিয়ে নিয়েছেন এতে কোন অসুবিধা হয়নি। কৃপা নিজের এলাকার জনগণের জন্য যে উদার সহানুভূতি দেখিয়েছেন তা কিন্তু হাইলাকান্দিবাসীর জন্য দেখাচ্ছেন না, না হলে এতদিনে ভৈরবী গুয়াহাটি ট্রেন চালু হয়ে যেত এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, আগামী ২৬ জুন ভৈরবী থেকে মিজোরামের হরতকি পর্যন্ত একটি সিআরএসএস পরিদর্শন করবে রেল বিভাগ বলে জানা গেছে। যা গত ৭ মে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা হয়ে উঠেনি। এই পরিদর্শনে উত্তর পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার থাকবেন বলে জানা গেছে। সিআরএস পরিদর্শনের পর কোন আশাজনক ফলাফল আসতে পারে এই ভাবনায় রয়েছেন জেলার দুর্ভাগা মানুষ।