পাথারকান্দিতে মাতিয়ে গেল চতুরঙ্গের দু’দিনব্যাপী পৌষ উৎসব
বরাক তরঙ্গ, ২২ জানুয়ারি : নাচ, গান, নাটক ও গুণীজন সংবর্ধনার পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল পাথারকান্দি চতুরঙ্গের দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান পৌষ পার্বন। গত শনিবার সকাল এগারোটায় স্থানীয় রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে সংস্থার পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দুদিন ব্যাপী এই পৌষ উৎসবের শুভারম্ভ করেন পাথারকান্দির সার্কল অফিসার বলীন বাবা বালারি। উপস্থিত ছিলেন পাথারকান্দি মডেল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শ্যামাপদ দে, আকসার কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা রুপম নন্দী পুরকায়স্থ, রনোজিৎ ধর, প্রমুখ। পরে অনুষ্ঠানের নির্ধারিত কার্যসূচি অনুযায়ী শুরু হয় লোকগীতি প্রতিযোগিতা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির। এতে বরাকভ্যালি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সহযোগিতায় বেশকিছু রক্তদাতা স্বেচ্ছায় রক্তদানের মত মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। সমস্ত দিন ব্যাপী চলে লোকগীতি প্রতিযোগিতা। এতে পাথারকান্দি সহ আশপাশের প্রায় অর্ধ শতাধিক সংগীত প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় সঙ্গীত শিক্ষিকা অমিতা রায় ও শ্রীভুমি থেকে আগত অপর শিক্ষাগুরু অর্পণ নাথ। এই প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে পূর্বা শ্যাম, পরিষ্মিতা শ্যাম ও অর্পণ দাস। ‘খ’ বিভাগে ১ম, ২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে প্রাচী শ্যাম, বাজারিছড়ার কোয়েল ভট্টাচার্য রিয়ারানি দে। একইভাবে ‘গ’ বিভাগে ১ম ও ২য় স্থান দখল করেন দিয়া দে ধর্মনগরের শিল্পী সম্রাট চন্দ।

এদিনের সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেন প্রবীণ শিক্ষিকা ছায়ারানি দাস, শিক্ষাবিদ শ্যামাপদ দে, সংস্থার প্রাক্তন উপদেষ্টা কৃপেশ দাশগুপ্ত সহ বিশিষ্ট অতিথিরা। পরে তাদের মঞ্চে ডেকে এনে বরণ করে নেন সংস্থার শিল্পীরা। এর পরপরই সংস্থার শিল্পীদের পরিবেশনায় সংস্থার উদ্বোধনী সমবেত সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এদিনের সন্ধ্যায় চতুরঙ্গের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট চার ব্যাক্তিবর্গ সমাজের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সংবর্ধনা হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন বিশিষ্ট শিক্ষিকা ছায়ারানি দাস, প্রবীণ নাট্যকর্মী পরিতোষ দে, শংকরলাল দে ছাড়া ও প্রবীণ বিশিষ্ট খেলোয়াড় শংকরলাল দাস।
দীর্ঘদিন পর রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে চতুরঙ্গ পরিবেশন করে নাটক ‘সৃষ্টির অভিশাপ’। এই নাটকটি অনেকদিন পর স্থানীয় নাট্যপ্রেমীদের নাটকের তৃষ্ণা জুগিয়েছে। এদিনের সন্ধ্যার শেষ নিবেদন ছিল পাশ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকে আগত নাট্যদল কথাচিত্রের প্রযোজনায় পরিবেশিত হয় নাটক ‘অপার পথ’ নাটকটি যথেষ্ট উঁচুমানের নাটক। পরদিন রবিবার অনুষ্ঠানের অন্তিম তথা শেষ দিনে সকাল থেকেই নৃত্য ও অংকন শিল্পীদের উপস্থিতিতে জমে ওঠে রবীন্দ্রভবন চত্বর। ভবনের একপ্রান্তে শুরু হয় লোকনৃত্য প্রতিযোগিতা এবং অন্যপ্রান্তে শুরু হয় অংকন প্রতিযোগিতা। এতে লোকনৃত্যে প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিযোগিরা সামিল হলে ও অংকনে প্রায় দেড় শতাধিকের ও অধিক শিল্পী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে চতুরঙ্গের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলেন। নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসন অলঙ্কিত করেন শ্রীভূমি থেকে আগত বিশিষ্ট নৃত্য শিক্ষিকা তৃনা পাল।

অন্যদিকে, অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন ধর্মনগরের সম্রাট ভট্টচার্য। এই প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে ফারমিন জন্নত, সম্রাট সিংহ ও রোনক সিনহা। ‘খ’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে নবনীতা দেব, সুকন্যা দাস ও রাজবীর দেবনাথ। একইভাবে ‘গ’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে বারইগ্রামের। সাগর রায়, রিয়া কানু, উদিত্য রায়।


এদিনের নৃত্য প্রতিযোগিতায় ক’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে সৃজিতা সেন, বীরভা দেবী, জওনা দাস। ‘খ’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে ঋতুজা দাস, মাহি দাস ও রোহিতা দেব। একইভাবে ‘গ’ বিভাগে ১ম,২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে রিমা দেব, কঙ্কনা দেব ও অপরূপা দেব। সান্ধ্যাকালীন অনুষ্ঠানে স্থানীয় নৃত্যনীড়ের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সাংষ্কৃতিক ও নাট্যানুষ্ঠান। এর পর পরই শ্রীভূমি থেকে আগত পরন দ্যা ব্যালেশিপের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় নাটক ‘সম্রাজ্ঞী’। হলভরা নাট্যপ্রেমী দর্শকদের উপস্থিতিতে নাটকটি যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। নাটক শেষে আমন্ত্রিত নাট্যদলের হাতে সংস্থার প্রয়াত নাট্য অভিনেতা সলিল পাল চৌধুরী স্মরণে স্মারক স্মৃতি স্মারক তুলে দেন প্রয়াতের জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা সিদ্ধার্থ শেখর পাল চৌধুরী। পরে একে একে স্থানীয় শিল্পী সুস্মিতা দাস, সৃষ্টি দেব ও চন্দা দেবের সমবেত এক নৃত্য পরিবেশিত হয়। একইভাবে একক নৃত্য পরিবেশন করে মঞ্চ দাপাতে দেখা যায় খুদে শিল্পী সৃজিতা সেন, প্রাচী শ্যাম, রিমা দেব ও মেঘা দত্তকে। পরে সংগীত শিল্পী হিসেবে দুই-একটি গান গেয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন দেন শিল্পী অমিতা রায় ও পঙ্কজ শ্যাম। অবশেষে উপস্থিত অতিথিদের হাত দিয়ে দুদিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের পুরস্কার ও শংসাপত্র বিতরনের মধ্য দিয়ে এই পৌষ উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
