বিজেপির জয়ে অগ্রণী ভূমিকায় কৃষ্ণেন্দু পাল, পাথারকান্দিতে ‘গ্রাসরুট কানেক্ট’-এর সাফল্য
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৩ মে : পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে এক অদৃশ্য কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী চালিকা শক্তি ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা অসম সরকারের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল। তৃণমূল স্তরে সংগঠনকে মজবুত করা, সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা এবং ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন এই তিন দিক থেকেই তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের ‘ডোর টু ডোর কানেক্ট’ মডেল, পঞ্চায়েত স্তরে স্থানীয় কর্মীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ধারাবাহিক রূপায়ণ, পাথারকান্দির জনগণের মনে বিজেপির প্রতি আস্থা দৃঢ় করে তোলে। এলাকা ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা দ্রুত সমাধানের দিশা দেখান তিনি, যার ফল মিলেছে ভোটবাক্সে। বিশ্লেষকদের মতে, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল কেবল একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, বরং একটি সংগঠক হিসেবেও সামনে এসেছেন, যিনি উন্নয়ন আর দলীয় শৃঙ্খলার সমন্বয়ে বিজেপিকে পাথারকান্দিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দক্ষিণ অসমের শ্রীভূমি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু চা-বাগান ও হিন্দু বাঙালি সহ জনজাতি মিশ্রিত এলাকা পাথারকান্দিতে বিজেপি নিজেদের এক প্রবল রাজনৈতিক আধিপত্য প্রদর্শন করেছে। চারটি এলা পরিষদ আসনে নিরঙ্কুশ জয়ের পাশাপাশি ২৩টি আঞ্চলিক পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে বিজেপি ও বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। সিংহ ভাগ ওয়ার্ড সদস্য বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই নজিরবিহীন জয়ের মাধ্যমে পাথারকান্দিতে বিজেপি তাদের শক্ত অবস্থান আরও একবার প্রমাণ করল। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনমানসে বিজেপির সংগঠন, উন্নয়নমূলক কাজ ও কেন্দ্র-রাজ্যের সম্মিলিত জনকল্যাণ প্রকল্পগুলির যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে, যার ফলস্বরূপ ভোটাররা বিজেপির পক্ষে রায় দিয়েছে। জেলা পরিষদে চার আসনেই বিজেপির সহজ জয়। এর মধ্যে দু’টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী জয় হাসিল করে নিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি।

এদিকে, লোয়াইরপোয়া জেলা পরিষদে প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্যা শেহেলি দে-র প্রতিনিধি তথা জেলা বিজেপির কৃষান মোর্চার সভাপতি অমিতাভ দে পাথারকান্দি বিজেপির এই বিশার জয় নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানান এই জয় শুধু সংখ্যা নয়, এটা পাথারকান্দির মাটির সঙ্গে বিজেপির আত্মিক সম্পর্কের প্রতিফলন। মানুষের প্রত্যাশা, উন্নয়নের স্বপ্ন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতিতে গভীর আস্থাই এই অভাবনীয় ফলাফল এনেছে। বিগত কয়েক বছরে আমরা স্থানীয় বিধায়ক তথা বর্তমান রাজ্য সরকারের মীন পশু পাল ও পূর্ত বিভাগের মন্তী কৃষ্ণেন্দু পালের দৃঢ নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ, পানীয়জল, সড়ক ও কৃষি সহায়তার মতো মৌলিক পরিষেবাগুলোতে যে বাস্তব ও দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটিয়েছি, সেটাই আজ ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে।এই জয় আমাদের কাছে গন্তব্য নয় এটি নতুন দায়িত্বের সূচনা। আমরা প্রতিটি কৃষক, শ্রমিক, মা-বোন ও তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আরও নিবেদিতভাবে কাজ করব। পাথারকান্দির ঘরে ঘরে এখন উন্নয়নের আলো পৌঁছেছে — এখন সময় সেই আলো আরও উজ্জ্বল করার। এইবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট করে দিয়েছে যে পাথারকান্দিতে বিজেপির রাজনৈতিক ভিত্তি এখন অত্যন্ত দৃঢ়। এখন সকলের দৃষ্টি আগামী ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে, যেখানে এই ফলাফল হয়তো একটি পূর্বাভাস রূপে বিবেচিত হবে।

আর কংগ্রেসের মুখরক্ষা করেছেন ঝেরঝেরি জিপি কাওছারা বেগম ও কাজিরবাজার পলডহর জিপি হেনা বেগম। বিজেপির এই সাফল্যের মাঝে কংগ্রেস সামান্য স্বস্তি পেয়েছে ঝেরঝেরি ও রাতাবাড়ি পঞ্চায়েত জিতে। যদিও পরাজয় প্রবল, তবুও এই দু’টি জয় কংগ্রেসের জন্য মর্যাদার বিষয়। স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সংগঠনকে মজবুত করে কংগ্রেস আবার ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত।
কাওসারা বেগমের স্বামী ভূমি সংরক্ষণ আন্দোলনের নেতা খাইরুল চৌধুরী উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে থেকে অসহার নিপিড়িত বঞ্চিত অসহায় জনগণের ন্যাপ পাইয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। আজকের এই জয় সেই পরিশ্রমেরই ফল বলে মেনে নিয়েছে জিপিবাসী। খাইরুল চৌধুরী বলেন, এই জয় আমার বা কাওসারার নয় গোটা জিপিবাসীর জয় হয়েছে। এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সহ জনগনের সেবায় নিয়জিত থাকার দায়িত্ব নিয়ে আগীম পথ চলাই আমার লক্ষ্য। এছাড়াও তিনি এও বলেন, এটা কেবল শুরু আমরা মানুষের জন্য কাজ করে দেখাবো এবং আগামী দিনে কংগ্রেসকে এই অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেব।

পাথারকান্দি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ও যুব নেতা প্রতাপ সিংহ পিলু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন এইবারের ভোটের ফলাফল আমাদের প্রত্যাশামতো না হলেও, আমরা ঝেরঝেরি ও কাজিরবাজার পলডহর জিপিতে অঞ্চল পঞ্চায়ের সদস্য পদে জিতে কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে সেই প্রমাণ রক্ষা করে দেখিয়েছেন ভোটাররা। এই ফলাফলে এটি প্রমাণ করে যে কংগ্রেস এখনও পাথারকান্দি থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি। আমরা এই ফলাফল বিশ্লেষণ করব, ভুল-ত্রুটি শুধরাবো এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করে আগামী দিনে আরও শক্তভাবে ময়দানে ফিরব। বিজেপি হয়তো এই মুহূর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, কিন্তু সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব উন্নয়ন ও জনসেবার মাধ্যমে আর সেই ক্ষেত্রেই কংগ্রেস নিজেদের উপস্থিতি আরও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করবে। এবং আগামী ২৬ এর বিধানসভার নির্বাচনে ময়দানে জবাব দিতে প্রস্ততি রয়েছে দল।