ধামাইলকে স্বীকৃতি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা সম্মিলিত লোকমঞ্চের
বরাক তরঙ্গ, ২৫ ফেব্রুয়ারি : বাঙালি জাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আবেগের সাথে জড়িত ধামাইল নৃত্যকে বলতে গেলে একপ্রকার সরকারী স্বীকৃতি প্রদান করলো আসাম সরকার । ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঝুমুর বিনন্দিনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে পরিবেশিত হলো বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী ‘ধামাইল নৃত্য’। গুয়াহাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সংবর্ধনার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকার প্রথমবারের মতো “ধামাইল” নৃত্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর এতে অত্যন্ত খুশি ব্যক্ত করে এধরণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে শিলচরের লোকচর্চা বিষয়ক সংগঠন সম্মিলিত লোকমঞ্চ শিলচর।
এব্যাপারে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সংস্থার সভাপতি ডঃ অনুপ কুমার রায় বলেন, ধামাইল আমাদের প্রাণের উৎসব যা আমাদের সামাজিক জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভবে জড়িত, সুতরাং ধামাইলের স্বীকৃতিতে আমরা ভীষণ ভাবে আনন্দিত এবং এজন্য আমাদের সংস্থা সম্মিলিত লোকমঞ্চ মূখ্যমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তিনি জানান, ২০২২ সাল থেকে ধামাইল নিয়ে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমরা প্রথমে জেলা ভিত্তিক ও পরবর্তীতে বরাক উপত্যকা ভিত্তিক সমবেত ধামাইল নৃত্য ও ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। অনুপবাবু জানান, সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গত বছর ২৬ মে আমরা আন্তর্জাতিক ধামাইল দিবস উদযাপন করেছি এবং পরবর্তীকালে কাছাড়ের জেলাশাসক মারফৎ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারক পত্র প্রদান করে ধামাইলকে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য হিসাবে ইউনেসকো দ্বারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন আমাদের দাবির স্বপক্ষে অন্যান্য সংস্থা এগিয়ে আসছে এবং এতে আমরা অত্যন্ত খুশি, আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।

এদিকে সংস্থার সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানাইলাল দাস বলেন, এব্যাপারে আমরা গত ডিসেম্বর মাসে আসাম সরকারের মন্ত্রীদ্বয় কৌশিক রয় ও কৃষ্ণেন্দু পাল, দুই বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী ও কমলাক্ষ দেপুরকায়স্থের দারস্থ হয়ে ধামাইলকে ঐতিহ্যগত নৃত্য হিসাবে স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দাবি জানিয়েছি। কানাইবাবু বলেন, আমরা তাদেরকে জানিয়েছি যে বিহু ও ঝুমুর নৃত্যের ন্যায় সরকারি তরফে বৃহৎ আকারে ধামাইল নৃত্যও যাতে আয়োজন করার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, এব্যাপারে মন্ত্রী কৌশিক রাই তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন বিহু ও ঝুমুর নৃত্যের ন্যায় অদূর ভবিষ্যতে কাছাড় জেলাতে ধামাইল নৃত্য আয়োজনের জন্য আসাম সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও তার নিজের বিভাগ বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগ যৌথ ভাবে উদ্যোগ নেবে। এদিকে, সম্মিলিত লোকমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর দাস জানান, দুশো বছরেরও অধিক পুরানো ধামাইলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ধামাইল উন্নয়ন পরিষদ আমাদের অনুপ্রেরণা প্রদান করেছে যারজন্য সমগ্র বিশ্বের সাথে সাথে আমরাও ২৬ মে আন্তর্জাতিক ধামাইল দিবস উদযাপন করেছি। ঐদিন আমাদের দাবির স্বপক্ষে অনেক জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গরা এগিয়ে এসেছিলেন। আমরা বাংলাদেশ ধামাইল উন্নয়ন পরিষদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এদিকে, সংস্থার সহ-সভাপতি মঙ্গলা নাথ, গৌতম সিনহা ও সুপ্রদীপ দত্তরায়, কোষাধ্যক্ষ ঝিমলি নাথ, যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কিতা ভট্টাচাৰ্য, বরিষ্ঠ সদস্যা স্মৃতি দাস, রাজশ্রী নাথ প্রমুখ জানান সম্প্রতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর রাজীব মোহন পন্থ ও বিহু ও ঝুমুর নৃত্যের ন্যায় ধামাইল নৃত্যও বৃহৎ আকারে আয়োজনের স্বপক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন, তারা বলেন আমরা চাই এই দাবি আরও জোরালো হোক। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সংবাদ জানিয়েছেন সম্মিলিত লোকমঞ্চের প্রচার সম্পাদক কমলেশ দাশ।