নব্বইয়ের দশকের হারানো শৈশব ফিরে আসছে পাথারকান্দি ভ্রাতৃসংঘের কালীপূজায়

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৭ অক্টোবর : শারদীয় দুর্গোৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই পাথারকান্দিতে শুরু হয়েছে কালীপূজার জোর প্রস্তুতি। শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় পুজো পাথারকান্দি ভ্রাতৃসংঘের কালীপূজা এ বছর দর্শনার্থীদের জন্য নিয়ে আসছে এক ব্যতিক্রমী থিম। আয়োজকরা এবার ফিরিয়ে আনছেন নব্বইয়ের দশকের হারানো গ্রামবাংলার শৈশব — সেই সোনালী দিনগুলোর অনন্য স্মৃতি, যা আজকের প্রজন্ম কেবল গল্পে শুনে জানে।

আয়োজক ক্লাবের সম্পাদক অভিজিৎ দাস ভিকি জানালেন, “নব্বইয়ের দশকে শহরের উঠোনে কিংবা গ্রামের মাঠে পড়ন্ত বিকেল মানেই ছিল বন্ধুদের সঙ্গে মার্বেল, ডাঙঘুটি, কানামাছি খেলা। দুপুরের গরমে মাঠের গন্ধ মাখা শরীর নিয়ে বাড়ি ফেরা — সেটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত। পাড়ার একমাত্র সাদা-কালো টেলিভিশনে রবিবার বিকেলের সিনেমা ছিল উৎসবের মতো, আর কেরোসিনের বাতির আলোয় পড়াশোনা — সেটাই ছিল এক চেনা গ্রামীণ বাস্তব।”

এইসব হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোকেই এবার নতুন করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে চলেছে ভ্রাতৃসংঘ। তাদের মণ্ডপে সাজানো হবে পুরোনো দিনের রেডিও, সাদা-কালো টিভি, হারিকেন বাতি, কেরোসিনের স্টোভ, মাটির তৈরি খেলনা আর আরও বহু স্মৃতিময় সামগ্রী। সেই সঙ্গে থাকবে নব্বইয়ের দশকের গ্রামীণ পরিবেশের প্রতিরূপ  কাঁচা রাস্তা, খেলার মাঠ, উঠোনে বসে গল্প করা মানুষ, আর কিশোর বয়সের হাসিমুখ।

এই থিমের মূল উদ্দেশ্য, নতুন প্রজন্মকে তাদের মা-বাবা ও দাদা-দিদাদের সময়ের সরল, অথচ আনন্দে ভরা জীবনের স্বাদ অনুভব করানো। অভিজিৎ দাস ভিকি বলেন, “আজকের মোবাইলের যুগে শৈশব বন্দি হয়ে গেছে স্ক্রিনে। আমরা চাই, দর্শকরা মণ্ডপে প্রবেশ করেই যেন অনুভব করেন সেই গন্ধ, সেই উষ্ণতা, সেই নস্টালজিয়া।”

এবারের পুজোর বাজেটও আগের বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিমা নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন শ্রীভূমির রূপ শিল্পালয়ের খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী, যিনি চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময় রূপে আনছেন নতুন ছোঁয়া। মণ্ডপ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে, আর সাজসজ্জায় যোগ হবে আলোর বিশেষ কারুকাজ ও ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের মেলবন্ধন।

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সাচ্ছন্দ্যের জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন একাধিক ব্যবস্থা। কালীপূজার দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত থাকবে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থান পথ, এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

সব মিলিয়ে এবারের পাথারকান্দি ভ্রাতৃসংঘের কালীপূজা শুধু এক উৎসব নয়  এক সময়ের ভ্রমণ, এক নস্টালজিয়ার উৎসব, যেখানে হারিয়ে যাওয়া শৈশব ফিরে আসবে আলো, রঙ আর স্মৃতির মায়ায়।

Spread the News
error: Content is protected !!