বাঙালিদের হেয় প্রতিপন্ন করার ধারা আজও বহমান

।। প্রদীপ দত্ত রায় ।।
(লেখক প্রাক্তন ছাত্রনেতা ও গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী)
২৩ জুলাই : অসমে বনাঞ্চলের জমি বেদখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। যারা উচ্ছেদের শিকার তাদের বাংলাদেশি বলে অভিহিত করা হচ্ছে। ৫০-৬০ বছর যাবৎ বসবাসকারীদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে তাদের বাংলাদেশি বলে তোপ দেগে দেওয়া হচ্ছে। বিদ্বেষমূলক মনোভাব নিয়ে এটা করা হচ্ছে, বিষয়টা লুকানো নেই। ঠিক তেমনি গুজরাট, ওড়িশা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি উৎখাতের নামে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এটা এমন একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যা দেশের ভেতরে ভাষিক দ্বন্দ্বকে প্রকট করে তুলছে। একই সঙ্গে জাতিগত বিদ্বেষের বীজ বপন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে শাসক দল তাদের মূল উদ্দেশ্য কি এনে ভাবনা চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে যেমন ২৮ কোটি বাঙালি রয়েছে ঠিক তেমনি ভারতবর্ষে রয়েছেন প্রায় ১৪ কোটি বাঙালি। এই জনসংখ্যার মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলেন এটা তো এমন কোন অপরাধ নয়। ভারতে বসবাসকারী বাঙালিরা বাংলাদেশি হতে যাবেন কেন? ভারতীয় নাগরিক বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে তকমা সেটে দেওয়া একদিকে যেমন অসাংবিধানিক কাজ অপরদিকে যথেষ্ট অমানবিক। বাঙালিদের কোণঠাসা করে রাজনীতির ময়দান দখল করে রাখার যে গভীর ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার পর থেকে বপন করা হয়েছিল তা এখন ধীরে ধীরে মহীরুহতে পরিণত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের দেশের অন্যান্য রাজ্যে হেনস্তা রোধ করতে  রাজ্যের মুখ্য সচিবকে পদক্ষেপ নিতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এতেই বুঝা যায় সারাদেশে বাঙালি হেনস্থা করার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অবশ্য এ নিয়ে সরব হয়েছেন। কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী সরকার থাকার পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটায় সন্দেহের বাতাবরণ তৈরীর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ওড়িশা রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর যে ধরনের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে বরিশালের কিছু মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়েছেন। তারাই প্রশ্ন তুলছেন, পশ্চিমবঙ্গে যেসব ওড়িয়া পাণ্ডা রান্নাবান্না বা ক্যাটারিং এর কাজে যুক্ত অথবা পাইপ মিস্ত্রির কাজে যুক্ত তাদের তো কোন ধরনের হেনস্থা করা হচ্ছে না। তাহলে ওড়িশায় পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিকদের কেন হেনস্থা করা হবে? দিল্লি বা গুজরাটে বাঙালিদের বস্তি উচ্ছেদ করে ঢালাও করে প্রচার করা হচ্ছে এরা বাংলাদেশি। বাঙালি বিদ্বেষী এই ঘটনাবলীর পেছনে যে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে  বলে আমি মনে করি।

যে বাঙালি সাহিত্য সংস্কৃতি দিয়ে গোটা বিশ্বে ভারতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাদের প্রতি এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দেমাতরম সঙ্গীতের রচয়িতা। প্রথম প্রতার আন্দোলন চলাকালে বাংলার কবি সাহিত্যিকদের অবদান আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতি পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাঙালিদের দেশপ্রেমের এই যে নিদর্শনের কোনও তুলনা হয় না।

বাঙালি জাতির ইতিহাস প্রায় ৭ হাজার বছরের পুরোনো। বিশ্বখ্যাত বাংলা ভাষার ইতিহাসকার আচার্য সুকুমার সেন, আচার্য মোহম্মদ শহিদুল্লাহর মতে চর্যাপদকে বাংলা ভাষার আদিরূপ ধরলে বাংলাভাষা হাজার –বারশো বছরের পুরনো। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় থেকে  আজকের আন্তর্জাতিক স্তরের ভাষা বিশেষজ্ঞ ও আসাম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য  অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যের মতে বাংলা ৫/৬ শতকের ভাষা (সুতনূকা প্রত্নলিপি সহ নানা নিদর্শনের সূত্র তিনি উল্লেখ করেছেন  ) অর্থাৎ দেড় হাজার মাত্র নয় প্রায় ৪ হাজার বছর আগের ভাষা বাংলা। আর বাঙালির অস্তিত্বের কথা উঠলে তার প্রত্ন ইতিহাস খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ৭ম/৮ম শতকের বলে বহু তথ্য সূত্রেই বাঙালির প্রত্ন তাত্ত্বিক নিদর্শন মেলে।  চর্যাপদকে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত  চর্যাপদে যে বাংলা কাব্যভাষা প্রকাশিত হয়েছে, নিশ্চয়ই তার আগে গদ্য বাংলার প্রচলন ছিল। তার সন্ধানের জন্য নানা মুখী অনুসন্ধান  করা হয়েছে। প্রখ্যাত গবেষক প্রবোধ বাগচির উল্লেখ সূত্রে তারা একটি  চিনা- সংস্কৃত অভিধানের সন্ধান পান যার সংকলক  ৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে। ঐ  অভিধানে অন্তত ৫০টা বাংলা শব্দের সন্ধান পাওয়া যায়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ আন্দামানের সেলুলার জেলে গেলে দেখা যাবে সেখানে যে তালিকা রয়েছে এর মধ্যে ৮০ শতাংশই বাঙালি বিপ্লবী। বাঙালিদের এই বিশাল অবদান প্রকারান্তরে চাপা দিয়ে রাখার জন্য বারবার ভিন্ন ভিন্ন চিত্রনাট্য রচনা করে আসা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনসংখ্যার নিরিখে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। আন্দামানে তিনি স্বাধীন ভারতের  পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছিলেন। তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। পরে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম থেকে রাষ্ট্রশক্তির বয়ানে বলা হয় তাইওয়ানে তাইহোকু  বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য আজও উন্মোচিত হয়নি। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হলেও কমিশন এ কাজে সফল হয়নি। সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে বাঙালিদের অবদান এতটাই যে অন্য কোন জাতির কাছে এটা এক প্রকার ঈর্ষার বিষয়। তাই, হিন্দি বলয়ের বরাবরই একটা লক্ষ্য হলো বাঙালিকে কোনঠাসা করে রাখা। একসময় জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং উঠেপড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু তাতে নানা মহল থেকে বাগড়া দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রণব মুখার্জির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে তাকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করা হয় পিভি নরসিংহ রাওকে। এরপরেও আরেকবার প্রণব মুখার্জির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো সুযোগ তৈরি হলে কংগ্রেস মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। প্রণব যাতে ভবিষ্যতে কখনও প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার হয়ে উঠতে না পারেন সেজন্য তাকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে রাজনীতির ময়দান থেকে আলবিদা জানানো হয়।

যে বাঙালি সাহিত্য সংস্কৃতি দিয়ে গোটা বিশ্বে ভারতকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তাদের প্রতি এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দেমাতরম সঙ্গীতের রচয়িতা। প্রথম প্রতার আন্দোলন চলাকালে বাংলার কবি সাহিত্যিকদের অবদান আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতি পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাঙালিদের দেশপ্রেমের এই যে নিদর্শনের কোনও তুলনা হয় না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঙালিরা। দেশ বিভাজনের বলি হয়েছিল বাংলা, সিন্ধু প্রদেশ এবং পঞ্জাব কিন্তু বাংলা ছাড়া ওই দুটি প্রদেশের মানুষ সসম্মানে ভারতের মাটিতে পুনর্বাসন পেয়েছে। কিন্তু বাঙালিদের ক্ষেত্রে জুটেছে লাঞ্ছনা। পশ্চিমবঙ্গের মরিচ ঝাঁপিতে উদ্বাস্তু বাঙালিদের উপর গুলি চালানো হয়। জোর করে তাদের দণ্ডকারণ্যে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর অসমে বাংলাভাষীদের প্রতি যে আচরণ শুরু হয়, তা এখনোও রূপ বদল করে বহমান। ভূমিপুত্র এবং বহিরাগত দুই শ্রেণিতে রাজ্যের মানুষকে বিভাজন ঘটানোর চক্রান্ত এখনো কাজ করে চলেছে। দেশ বিভাজনের পর শ্রীহট্টকে গণভোটের নামে প্রহসন করে পাকিস্তানে ঠেলে দেওয়া হয়। শ্রীহট্ট অঞ্চলের হিন্দু মানুষ নিরাপত্তার প্রশ্নে বাধ্য হয়েই অসমের অন্যান্য জেলাগুলিতে চলে আসেন। এই মানুষজনকে হেনস্থা করার জন্যই রচিত হয় ষড়যন্ত্র। ভাষা ও শিক্ষার অধিকার হরণের মতো ষড়যন্ত্র হয়েছিল। যদিও প্রবল প্রতিরোধে তা ভেস্তে যায়। স্বাধীনতার সময় অসমসহ গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অসমে এসে জননায়ক অরুনকুমার চন্দ, সতীন্দ্রমোহন দেব এবং বৈদ্যনাথ মুখার্জির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে মুসলিম লিগ মন্ত্রিসভার পতন ঘটিয়ে গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠন করে দিয়েছিলেন। নেতাজি সেই সময় উদ্যোগ না নিলে আজ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত থাকতো। এ কথাটা স্মরণ করে বাঙালি মানুষের  প্রতি যে ধরনের আচরণ করা উচিত তা কিন্তু করা হচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।

আদালতের নির্দেশের দোহাই দিয়ে অসমে বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় বনাঞ্চলের জমি থেকে উচ্ছেদ করার যে অভিযান শুরু হয়েছে তাতে বলা হয়েছে এরা নাকি সবাই বাংলাদেশি। এটা যদি সত্য হয় তাহলে প্রশ্ন উঠে, ১৯ ৮৫ সালে অসম চুক্তি স্বাক্ষরের পর অসমে অসম গণ পরিষদ দল সরকার গঠন করে। আঞ্চলিক এই দলটি  নিজের পরিচয় জাতীয়তাবাদী হিসেবে তুলে ধরেছিল। অসমে যদি এতই বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছে তাহলে তারা কেন এই বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠালো না? অসম গণ পরিষদ দলে যারা কর্তা ব্যক্তি তারা তো সারা আসাম ছাত্র সংস্থা বা আসু এবং গণ সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্যই তো ছিল বিদেশি বহিষ্কার করা। তাহলে তাদের সরকারের আমলে কেন বিদেশীদের বহিষ্কার করা সম্ভব হলো না, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আমরা চাই না কোনো অবৈধ বিদেশী ভারতের মাটিতে থাকুক। কিন্তু দেশভাগের বলি হয়ে কোন মুসলমান তো অসমে আসেনি। এরা তো এই রাজ্যে অনেক আগে থেকেই বসবাস করছে। কাজেই তাদের বাংলাদেশি বা বঙ্গীয় মূলের বলে তোপ দেগে দেওয়ার বিষয় কতটা যুক্তিযুক্ত। অসমের এই মুসলমানদের মধ্যে একাংশ নিজেদের মাতৃভাষা অসমীয়া হিসেবেই বরাবর লিখে এসেছেন। তবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কিছু মুসলমান মানুষ নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা লিখিয়ে এসেছেন।  এটা নতুন কোন বিষয় নয়। এবার মাতৃভাষা কে কি লিখলো এ নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে চাপান উতোর শুরু হয়েছে। আদমশুমারিতে মাতৃভাষা লেখার এই বিষয়কে কেন্দ্র করে কোনো সংগঠন যদি মনে করে অসমের জন্য বিন্যাস এর মাধ্যমে পাল্টে দেওয়া যাবে তাহলে তারা ভুল করছে। কারণ এ রাজ্য বহুভাষী। এবিআমসু নামের এক সংগঠনের  এক নেতা মইনুদ্দিন আলি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন অসমের সব মুসলমানরা মাতৃভাষা বাংলা লেখালে অসমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। এই বিবৃতি পেয়ে এর পাল্টা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, মুসলমানদের অধিকাংশ তো নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা লিখেই এসেছেন। তিনি বলেছেন মাতৃভাষা বাংলা লিখলে বাংলাদেশি খুঁজে বের করতে এনআরসির প্রয়োজন পড়বে না। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক ময়দানে আসর গরম করার জন্য যথেষ্ট। তবে, প্রকৃত অর্থে এ বক্তব্য অন্তসার শূন্য বলতে হবে। কারণ, কেউ যদি বাংলা ভাষায় কথা বলে তাহলে তাকেই বাংলাদেশি হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে না। অসমে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিরা নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা লিখে এসেছেন। এবারও তাই লিখাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল বাংলা কথা বললেই বা বাঙালি পরিচয় দিলেই তাদের বাংলাদেশী বলে তকমা সেটে দেওয়ার এই প্রবণতা কেন?

উচ্ছেদ নিয়ে এখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ১৯৭১ সালের আগের নথি দেখাতে পারলে সরকার তাদের বিনামূল্যে জমি দেবে। তার মানে সরকার নিশ্চিত যে যারা উচ্ছেদের বলি হয়েছেন তারা সবাই বাংলাদেশি নন। আবার মুখ্যমন্ত্রী এটাও বলেছেন,  যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তারা কেউ ভূমিহীন নয়। তাদের অন্যত্র ভূমি রয়েছে। এসব বিষয় সরকারের দেখার কর্তব্য এ নিয়ে আমি কোন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করতে চাই না। তবে নানা অজুহাতে বাঙালিদের প্রতি যে বৈষম্য করা হচ্ছে এ বিষয়ে নিরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারবো না। চাকরি-বাপরির ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি অন্যায় অবিচার চলছে। অসমে এক তৃতীয়াংশ মানুষ বাঙালি, কিন্তু মন্ত্রিসভায় মাত্র একজনকেই রাখা হয়েছে। অথচ, কংগ্রেস জমানায় এই ক্ষেত্রে এতটা বৈষম্য করা হতো না। হিন্দু বাঙালিরা বিজেপির ভোট ব্যাংক ,কিন্তু দেখা যায় ভোট বৈতরণী পার হওয়ার পরেই হিন্দু বাঙালিদের প্রতি সুবিচার করা হয় না। এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের অবস্থা তো বর্ণনা করার মত নয়। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কিছু মানুষ বাঙালিদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভব্য কথাবার্তা বলে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ করে না। এর ফলে রাজ্যে ফের বাঙালি বিদ্বেষী পরিবেশ গড়ে ওঠছে। এটা রাজ্যের সামগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী বলেই আমি মনে করি। প্রতিটি জনগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাওয়া উচিত। একইভাবে সুযোগ-সুবিধাও দেওয়ার সরকারের কর্তব্য। বরাকের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা যে ধরনের নির্বিকার ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পরিস্থিতিটা আরো ভয়াবহ। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে সকল নেতা কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আপত্তিকর ও কুরুচি কর মন্তব্য করা হচ্ছে। একটা সুস্থ গণতন্ত্রে এসব সমীচীন কাজ বলে বিবেচনা করা সম্ভব নয়।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Spread the News
error: Content is protected !!