পশ্চিম শিলচরের বন‍্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, শতাধিক পরিবার অস্থায়ী শিবিরে

পিএনসি, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৫ জুলাই : বরাকের জল কমলেও পশ্চিম শিলচর এলাকার সামগ্রিক বন‍্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। হাতিরহাড়ের বাঁধ টপকে হু হু করে ঘাগরা নদীর জল প্রবেশ অব‍্যাহত থাকে। অপরদিকে মানিকপুরে টিআরকে সড়ক উপচে দ্রুত গতিতে বরাকের জল প্রবেশ করেছে। এছাড়াও অসংখ্য কালভার্ট, স্লুইচগেট হয়ে জল প্রবেশ করে মানিকপুর, মাছুঘাট, বৈরাগীবাজার, হাতিরহাড়, আলগাপুর, রাখাল খালের পার প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ড, নাথপাড়া, কুমারপাড়া, টিকরগ্রাম, রায়পুর, জয়নগর আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ বন‍্যার কবলে পড়েছেন। এসব গ্রামের শতাধিক পরিবারের মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে এদিন।

এদিকে, বন‍্যার জলে টিআরকে সড়কের শিলচর বিধানসভা এলাকার একাংশ জলের তলায়। রাখালখালেরপার এবং কুমার পাড়ার অনেকে জানিয়েছেন, এই নিয়ে এক মাসের মধ্যে দুইবার তাদেরকে ত্রাণ শিবিরে যেতে হয়েছে। গোবাদি পশুদের নিয়ে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন অরুণাচলে থাকা কাছাড় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে। এদিকে অরুণাচলে থাকা কাছাড় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের জৈষ্ঠ্য বিজ্ঞানী  আব্দুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের হোস্টেলে ৪০টি পরিবারের প্রায় দেড়শ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় যারাই আসবেন তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা হবে। 

পশ্চিম শিলচরের বন‍্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, শতাধিক পরিবার অস্থায়ী শিবিরে

কুমারপাড়া নিজ জয়নগর জিপির প্রাক্তন সভাপতি ফরিদা পারভিন লস্কর জানান, বন্যায় কুমারপাড়া জিপির পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রায়শতাধিক পরিবার ঘর ছাড়া। এদের মধ্যে অনেক জিলকদর আলি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ৫০ নং বালিঘাট এলপি স্কুল, এসি মেমোরিয়াল স্কুল, উজানগ্রামের তৈয়ব আলী এলপি স্কুল অন্যান্য স্থানে কন্যা আক্রান্তরা আশ্রয় নিয়েছে। তিনি আরও জানান এসি মেমোরিয়াল স্কুল থেকে নয়াগ্রাম সড়ক এবং উজানগ্রাম থেকে জয়নগর সড়কে প্লাবনের জল উঠেছে। জলসম্পদ বিভাগের চরম খামখেয়ালিপনার জন্য এমন দুর্গতি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে এমনটাই অভিযোগ করলেন তিনি। 

পশ্চিম শিলচরের বন‍্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, শতাধিক পরিবার অস্থায়ী শিবিরে

শ্রীকোণা জিপির প্রাক্তন এপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার সকালে শালচাপড়া টুকরগ্রামে বাঁধ ভেঙে হু হু করে ঢুকছে বরাকের জল। বন‍্যার জল টুকরগ্রাম হয়ে ঢুকে শালচাপড়া আনুয়া হয়ে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত করছে। বিপত্তি এখানেই শেষ নয় কাটাখাল নদীর জল বাঁধ টপকে ঢুকছে। তিনি জানান, দুই নদীর জল ঢুকে শুকতারা, বরাকপার, শালচাপড়া প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ড, ঘাগরা, শালচাপড়া গ্রান্ট, গুড়বস্তি, ঘাগরাপার, টিলাগ্রাম সহ গোটা তাপাং উন্নয়ন খণ্ডের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। ক্ষতি হয়েছে ৬৬ নং বরাক নদী আনোয়ারও। দ্রুত গতিতে জল বাড়ার ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার হাজার হাজার মানুষ। 

এদিকে, মে মাসের বন‍্যায় তারাপুর শিববাড়ি ভাঙন কবলিত এলাকা জল উঠেছিল। সেই থেকে শিলচর কালাইন সড়কের এই অংশে হাল্কা যান চলাচল করছে। সকল ধরনের পণ্যবাহী লরির যাতায়াত একেবারেই বন্ধ। বেশ কয়েক বছর ধরে নদী-ভাঙন ভয়াবহ চেহারা নিয়ে শিলচর-কালাইন সড়ককে গ্রাস করছিল। মেরামতির নামে বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি এমন অভিযোগ এলাকার মানুষের।   গত বন‍্যার সময় মাছিমপুর কাটাখাল ডাইকের বিভিন্ন স্থান হয়ে প্লাবনের জল উপচেপড়া প্রবেশ করেছিল। কেন জলসম্পদ বিভাগের তরফে এইসব এলাকায় সঠিক সময়ে কাজ করা হয়না এমন সওয়াল সাধারণ মানুষের।

এদিকে জলসম্পদ বিভাগের কার্যনির্বাহী অভিযন্তা কে জামান-কে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান,  ঘাগরাপারের টুকরগ্রামের বাঁধের কাজ চলছিল তবে সম্পূর্ণ হয়নি। এরই মধ্যে বন্যা এসে যায়। তাই বিপত্তি ঘটেছে। রাখালখালেরপারের বিসর্জন ঘাটে পাশে স্লুইচ গেট সংলগ্ন ভাঙা সড়ক কাম বাঁধ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখানে কাজ ধরা হয়নি। তবে বন্যার জল আটকানোর জন্য প্রচেষ্টা চলছে। হাতির হাড়ের নিম্ন অংশ প্রসঙ্গে কে জামান বলেন, এই অংশ নিয়ে বিশেষ চিন্তা নেই জল যেমন দ্রুত ঢুকে তেমনি বেরিয়ে যাবে। আগামীতে এই অংশের সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি। তবে যতেষ্ট জল বাড়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Author

Spread the News