প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শারদোৎসবের পরিসমাপ্তি পাথারকান্দিতে
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৩ অক্টোবর : বিজয়া দশমীর প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল বৃহত্তর পাথারকান্দি সমজেলায় এবারের শারদোৎসব। বলতেই গেলে প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই এবারের দুর্গোৎসব উদযাপন করলেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
মহাষষ্ঠী থেকে মহাসপ্তমী পর্যন্ত আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকলেও মহাঅষ্টমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত শরতের শান্ত স্নিগ্ধ আবহাওয়া যেন আচমকাই রূপ বদলায়। প্রবল বর্ষণ আর ঝোড়ো হাওয়ার কারণে অনেক সময় সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও উৎসবের আনন্দে ভাটা পড়েনি। প্রকৃতির রুষ্ট রূপকে উপেক্ষা করেই পুজোর চারদিন ভক্তদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে বৃহত্তর পাথারকান্দি।
পুজোর শুরু থেকে প্রশাসন সজাগ থাকায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মেলেনি। স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং এসডিআরএফ, ফায়ার ব্রিগেড ও মেডিক্যাল টিমের প্রস্তুত থাকার কারণে ভক্তরা নির্ভয়ে উৎসব উপভোগ করতে পেরেছেন
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর পাথারকান্দিতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২২৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪৩টি। যদিও সংখ্যায় সামান্য হ্রাস ঘটেছে, তবুও ভক্তদের উচ্ছ্বাসে কোনও ঘাটতি ছিল না।
বরাবরের মতো এ বছরও চমক ছিল বিভিন্ন পূজা কমিটির আয়োজনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাথারকান্দি মধ্যবাজার সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, দক্ষিণ পাথারকান্দি সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, পঞ্চশিখা ক্লাব, অপরাজিতা ক্লাব, উত্তর পাথারকান্দি মহিলা সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, মধ্য পাথারকান্দি দুর্গাপূজা কমিটি, প্রতাপগড় সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি বাজারিছড়া শিববাড়ি সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, কালাছড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, কালাছড়া হাসপাতাল রোড বারোয়ারি পূজা কমিটি, কালাছড়া পুরাতন শিববাড়ি পূজা কমিটি, নেতাজিপল্লি কালীবাড়ি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট পূজা কমিটি।
এছাড়াও লোয়াইরপোয়া, শিবেরগুল, বাজারিছড়া, ঝেরঝেরি, রাঙ্গামাটি, কটামণি, চাঁন্দখিরা, চুরাইবাড়ী, সোনাখিরা, কাঁঠালতলি, মেদলি, পুতনি, চাম্পাবাড়ি, আদমটিলা, তিনখাল, দেওলাখাল, লালখিরা, বালুরবন্দ, ত্রিমুটি, দোহালিয়া, সলগই, রাধাপ্যারি, হরিবাসর, বৈঠাখাল, ইচাবিল, হাতিখিরা, নাগ্রা, কন্টেকছড়া বালিপিপলা প্রভৃতি অঞ্চলেও পূজা উদযাপিত হয়।
এবছর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মানিকবন্দ ও হাতাইছড়া এলাকায় পাহাড়ি জনজাতি সমাজের মানুষরাও তাঁদের নিজস্ব আঙ্গিকে দুর্গাপূজা আয়োজন করেছেন, যা উৎসবে বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক মিলনের আবহ সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর সকালেই প্রথমে নিয়ম মেনে কলাবউ নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়। এরপর সন্ধ্যা ঘনাতেই শুরু হয় দেবী বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। বাজারিছড়া, কালাছড়া, লোয়ারপোয়া ব্রিজ, লোয়ারপোয়া মোটরস্ট্যান্ড, কয়লাঘাট, সলগই, পাথারকান্দি ও কলকলিঘাটে লঙ্গাই নদী এবং দোহালিয়ার সরকারি পুকুরগুলোতে একে একে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়। চারিদিকে বাজি-পটকার শব্দ, ঢাক-ঢোলের আওয়াজ আর শঙ্খধ্বনির মধ্যে হাজারো ভক্ত আবেগঘন পরিবেশে মায়ের বিদায় মুহূর্তে সামিল হন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিরঞ্জন ঘাটকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো হয়। কড়া নিরাপত্তা, বাড়তি আলোর ব্যবস্থা, জলপথে নজরদারি, এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা।
বৃষ্টি, ঝড়-ঝাপটার মাঝেও পুজোর আনন্দে ভক্তদের উচ্ছ্বাসে কোনও ভাটা পড়েনি। প্রতিমা নিরঞ্জনের দীর্ঘ রাত পর্যন্ত চলা উৎসবের আবহ শেষ পর্যন্ত পাথারকান্দির আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছিল এক অন্যরকম আবেগ ও অনির্বচনীয় শারদীয় স্মৃতি।