কালিকাপ্রসাদের জন্মদিনে জেলা প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান
বরাক তরঙ্গ, ১২ সেপ্টেম্বর : লোকসঙ্গীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। তাঁর জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে জেলা প্রশাসন, তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর ও সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পালিত হল “লোক সংহতি দিবস”। ১৯৭০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শিলচরে জন্ম নিয়েছিলেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। আর ওই দিনে “লোক সংহতি দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শিল্পীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও পরিবার-পরিজন সকলেই একে একে শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সহকারী আয়ুক্ত তথা জেলা সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের শাখা আধিকারিক ও তথ্য-জনসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপসঞ্চালক দীপা দাস। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন— “কালিকাপ্রসাদ শুধু গায়ক ছিলেন না, তিনি আমাদের লোকঐতিহ্যকে নতুন মর্যাদা দিয়েছিলেন। তাঁর কণ্ঠে লোকগান পেয়েছিল মানুষের মনের ভাষা। আগামী প্রজন্ম তাঁর সৃষ্টির আলোয় পথ চলবে।”
শিল্পীর ভগ্নীপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমর বিজয় চক্রবর্তী শিল্পীর জীবনের নানা অজানা ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান— শিলচরের ছোট্ট শহর থেকে কলকাতার মঞ্চে পৌঁছানো সহজ ছিল না, কিন্তু কালিকা দৃঢ়সংকল্পে অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তাঁর সাধনা ও গবেষণাই গড়ে তুলেছিল ‘দোহার’ দলকে, যা আজ আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত।
অনুষ্ঠানে শুধু বক্তব্য নয়, ছিল একের পর এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বরাক উপত্যকার খ্যাতনামা শিল্পীরা পরিবেশন করেন কালিকা প্রসাদের অমর গান— ভাটিয়ালি, জারি-সরগম, গ্রামের মাঠের সুর। শ্রোতাদের আবেগে ভাসিয়ে দেয় সেই সঙ্গীত। প্রয়াত শিল্পীর ভ্রাতুষ্পুত্র সৌমিত্র শঙ্কর চৌধুরীর নৃত্য পরিবেশনা অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করে।
উল্লেখ্য, অসম সরকার ইতিমধ্যেই ১১ সেপ্টেম্বরকে “লোক সংহতি দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই দিনটির তাৎপর্য আজ শিলচরের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমগ্র অসমের সাংস্কৃতিক জগতে প্রতিফলিত হচ্ছে। এদিন সকালে শিলচর শহরে স্থায়ী মাইক যোগে কালিকাপ্রসাদের অমর গান প্রচারিত হয়, যা গোটা শহরকে সুরময় করে তোলে।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শান্তিকুমার ভট্টাচার্য, বিধান লস্কর, মঙ্গলা নাথ, মনোমিতা গোস্বামী, রাজু দেব ও সর্বানী ভট্টাচার্য। তাঁদের তবলায় সঙ্গত করেন ভাস্কর দাস। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিলচরের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক জয়দীপ চক্রবর্তী।