রবিবার বড়খলায় বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সমিতির ৪৩-তম বার্ষিক সাধারণ সভা
বরাক তরঙ্গ, ২১ জুন : বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির ৪৩-তম বার্ষিক সাধারণ সভা আগামীকাল রবিবার বেলা এগারোটায় বড়খলা স্থিত সেডো সাংস্কৃতিক ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তী তাতে সভাপতিত্ব করবেন। কেন্দ্রীয় সমিতির পদাধিকারী, কার্যনির্বাহী সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন তিন জেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সমিতির মনোনীত প্রতিনিধিবৃন্দ। প্রতিনিধি সভার শেষে বিকেল তিনটায় রয়েছে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে অবশ্য প্রবেশ অবাধ। এই পর্বে উপস্থিত থাকার জন্য বড়খলা অঞ্চলে সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত এই খবর দিয়ে বলেন, এ বারের বার্ষিক সাধারণ সভার জন্য উপত্যকার ঐতিহ্যশালী গ্রাম বড়খলাকে নির্ধারিত করা হয়েছে। সম্মেলনের বড়খলা আঞ্চলিক সমিতি একদিবসীয় এই সাধারণ সভা আয়োজনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। অভ্যর্থনা সমিতি গঠন করে তাঁরা বেশ কিছুদিন ধরেই বৃহত্তর বড়খলা অঞ্চলের সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন জনগণের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সার্থক করতে আন্তরিক চেষ্টা করে চলেছেন।
স্থানীয় মাতৃভাষাপ্রেমী জনগণ, লেখক-শিল্পী-কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এই এক-দিবসীয় কার্যসূচির অন্যতম বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর। তিনি বলেন, ইংরেজ শাসনের পূর্বকালেই আত্মপ্রকাশ করা বড়খলা গ্রামটি ডিমাসা রাজত্বকালেই কৃষি, বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রগতি লাভ করে। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে গ্রামের নৃমাতা মন্দির, রণচণ্ডী মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, দশভুজা মন্দির সম্বন্ধে বিদগ্ধজনের কৌতূহল অদম্য। মহারাজ গোবিন্দচন্দ্র নামাঙ্কিত শতবর্ষ প্রাচীন বিদ্যালয় এই গ্রামের গৌরব ধারণ করে আছে। জাতীয় আন্দোলনে বিশ শতকের দুইয়ের দশকে এই গ্রামের অংশগ্রহণ সর্বজন স্বীকৃত ইতিহাস। স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রমোহন দেবলস্কর, সূর্যমণি রায়, অবন্তীকুমার শর্মা, ইরমান মিঞাঁ বড়ভূইয়া, সাহিত্য সরস্বতী রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, নলিনীকুমার শর্মা, চৈতন্যচরণ নাথ, শরৎচন্দ্র মজুমদার, হরেন্দ্রচন্দ্র সেন (সোনাপুর), হুরমত আলি বড়লস্কর (বুড়িবাইল), ইরফান আলি চৌধুরী, মণীন্দ্রচন্দ্র বর্মন, সুরেশচন্দ্র বর্মন, মজিদ আলি মজুমদার, গৌরনিতাই সিং, মুজিবর রহমান বড়ভুঁইয়া, তারাচরণ চক্রবর্তী, ব্রহ্মময়ী রাহা, মুন্সি ওয়াজিদ আলি– এঁদের স্মৃতি বিজড়িত এ গ্রামের সাংস্কৃতিক জগৎকে উজ্জ্বল করে রেখেছেন কীর্তন ভাসান গানের ওঝা, পাঁচালিকার, যাত্রাগানের শিল্পী,
গায়ক বাদক। এঁদের মধ্যে হিন্দু মুসলিম মণিপুরি, ডিমাসা চা শ্রমিকও রয়েছেন। তাঁর কথায়, কালের বিবর্তনে বড়খলা গ্রাম পাদপ্রদীপের আলো থেকে সামান্য দূরে সরে যাওয়ায় গ্রামের উন্নয়ন যথাযথ মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।
বঙ্গ সাহিত্যের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বড়খলা আঞ্চলিক সমিতির ঘনিষ্ঠ সংযুক্তি এ গ্রামকে আবার পাদপ্রদীপের আলোতে তুলে ধরবে বলে অভ্যর্থনা সমিতি আশাবাদী।
