বালিপিপলায় শ্রীরাম বনবাস ও কৃষ্ণ সারথী পালা শুরু

পিপলাপুঞ্জ গ্রামে শ্রীশ্রী কৃষ্ণ সারথী কুরুক্ষেত্র উৎসবে ভক্তিময় পরিবেশ_____

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২৭ ফেব্রুয়ারি : পাথারকান্দির সীমান্তঘেঁষা বালিপিপলা জিপির পশ্চিম পিপলাছড়াতে লঙ্গাই ভ্যালি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংঘের উদ্যোগে শ্রীরাম বনবাস (লঙ্কাকাণ্ড) ও কৃষ্ণ সারথী (কুরুক্ষেত্র) পালার শুরু হল। শিব চতুর্দশীর রাতে শুরু হওয়া এই ধর্মীয় আয়োজনে সনাতনী রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।অনুষ্ঠানের আগে স্থানীয় নাটমন্দিরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়  মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মহাসভার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রামকৃষ্ণ সিংহ ও প্রতাপ সিনহা পিলু সহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আলোচনায় বক্তারা এই ধর্মীয় ঐতিহ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনে সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

বালিপিপলায় শ্রীরাম বনবাস ও কৃষ্ণ সারথী পালা শুরু

এমর্মে লঙ্গাই ভ্যালি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংঘের সভাপতি বিমলা প্রসাদ সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপকুমার সিংহ জানান, ১৯৬১ সাল থেকে এই বিশেষ দুটি ধর্মীয় পালা এখানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তৎকালীন সময় প্রয়াত চৌরজিত সিংহ, সহদেব সিংহ, সুরেশ্বর ব্যানার্জি, ফুলেশ্বর সিংহ, ধনসেনা সিংহ ও রামমোহন সিংহ প্রমুখরা এই মহতী আয়োজনের সূচনা করেন। তাঁরা রামায়ণ ও মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করে সনাতনী ধর্মের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেন এবং ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করেন। পাথারকান্দির প্রাক্তন বিধায়ক কার্তিকসেনা সিংহের নেতৃত্বে একসময় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে কুরুক্ষেত্র ও লঙ্কাকাণ্ড পালা অনুষ্ঠিত হতো।তবে কিছু বছর এই আয়োজন বন্ধ থাকার পর, এবার পুনরায় তাঁর প্রাক্তন বিধায়ক কার্তিকসেনার তৎপরতায় ফের পালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বালিপিপলায় শ্রীরাম বনবাস ও কৃষ্ণ সারথী পালা শুরু

চারদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বুধবার রাত ১১টা থেকে শুরু হয় কুরুক্ষেত্র পালা বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সমাপ্ত হয়। শুক্রবার রাত ৯টা থেকে লঙ্কাকাণ্ড পালা শুরু হয়ে শনিবার বিকালে শেষ হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ধর্মীয় আয়োজনে স্থানীয় হিন্দু সমাজের বিপুল সমর্থন রয়েছে। এছাড়াও, মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন।

বালিপিপলায় শ্রীরাম বনবাস ও কৃষ্ণ সারথী পালা শুরু

এদিকে, ধর্মীয় এই আয়োজনে পাথারকান্দির প্রাক্তন বিধায়ক কার্তিকসেনা সিংহের দানকৃত পশ্চিম পিপলাছড়ার নাটমন্দিরটিকে আধুনিকভাবে সংস্কার করার জন্য লঙ্গাই ভ্যালি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সংঘের পক্ষ থেকে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের কাছে দাবি জানানো হয়।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ও বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমরজিৎ সিংহ, শুভাশিস সিংহ সহ অনেকে।এদিন পিপলাপুঞ্জ গ্রামে ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভক্তির মহোৎসব হয়ে উঠল শ্রীশ্রী কৃষ্ণ সারথী কুরুক্ষেত্র অনুষ্ঠান। মহাভারতের ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের স্মরণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভক্তদের ঢল নামে।অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, গীতাপাঠ, ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসব মুখরিত হয়ে ওঠে সমগ্র এলাকা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ধর্মগুরুগণ, যাঁরা শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও গীতার দর্শন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ভক্তদের মধ্যে এক অনন্য উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় সুসজ্জিত মঞ্চ ও আলোকসজ্জায় পুরো পরিবেশ হয়ে ওঠে এক অভূতপূর্ব আধ্যাত্মিক মণ্ডপ। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির এক অপূর্ব চিত্র ফুটে ওঠে এই আয়োজনে। এই মহতী অনুষ্ঠানে বৃহত্তর সনাতনী সমাজের সক্রিয় সহযোগিতা ও উপস্থিতি কামনা করেছেন আয়োজকরা।

Author

Spread the News