শারদ স্মারক প্রদানের মধ্য দিয়ে পাথারকান্দি পঞ্চশিখা ক্লাবে জমজমাট বিজয়া সম্মেলন সম্পন্ন

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৯ অক্টোবর : দুর্গাপূজার মহাষ্টমী থেকে দশমীর মহালয়ার ধ্বনি শেষ হওয়ার পরও বাঙালির হৃদয়ে উৎসবের রেশ যেন শেষ হয় না। প্রতিবারের মতো এবারও পাথারকান্দি পুরাতন কালীবাড়ি রোডের প্রখ্যাত পঞ্চশিখা ক্লাব তাদের ঐতিহ্যবাহী বিজয়া সম্মেলন-এর আয়োজন করে। বুধবার সন্ধ্যায় ভাসান-পরবর্তী পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ছিল উৎসবের আবহ, আবেগ, ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের এক অনন্য ছবি।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী জুবিন গর্গের প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে। প্রয়াত শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনায় সকলেই দাঁড়িয়ে ত্রিশ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানের এই সূচনালগ্নেই আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। শঙ্খধ্বনির অনুরণন আর উলুধ্বনির ধ্বনি গোটা পরিবেশকে করে তোলে উৎসবমুখর। এ ছাড়াও দর্শকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আয়োজন করা হয় আকস্মিক শারদীয় কুইজ প্রতিযোগিতা, যেখানে পুজো-সংস্কৃতি, দেবদেবী ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরে সবাই মেতে ওঠেন।

কুইজের পর মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত শিল্পীরাও গান, নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করেন। কচিকাঁচাদের প্রাণবন্ত নৃত্য, তরুণ-তরুণীদের সুরেলা কণ্ঠ, আর আবৃত্তিকারদের আবেগঘন উপস্থাপনায় দর্শক আসন পূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও দর্শকের ঢল অনুষ্ঠানের প্রাণশক্তি বাড়িয়ে তোলে।

স্বাগতিক বক্তব্যে ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা পুলক সোম বলেন আমাদের পঞ্চশিখা ক্লাবের দুর্গাপুজো এবছর ৪৮ বছরে পা দিল। নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই পুজো একদিনও থেমে যায়নি। প্রতি বছরই আমরা সাত্বিকতার সঙ্গে পুজো করি। এবার আমরা পঞ্চাশ বর্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। আগামী বছর দশভুজা মায়ের পূজা আয়োজনে সবার আশীর্বাদ আমাদের পথচলার পাথেয় হবে।অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত আকর্ষণ ছিল স্থানীয় জনপ্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গ-এর পরিবেশনা। তারা মঞ্চস্থ করে আঞ্চলিক ভাষায় লেখা নাটক “আলোর দিশারী”। নাটকের আবেগঘন কাহিনি ও প্রাঞ্জল সংলাপে দর্শকদের হাততালি ও সমর্থন বারবার থামতে চায়নি।

শেষ পর্বে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি প্রতিযোগিতায় জয়ী ছয়জনকে সংবর্ধিত করা হয়। পাশাপাশি চতুরঙ্গের শিল্পী-সদস্যদের হাতে শারদ শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন গোপাল কর, নন্দন সোম, তপন কুমার রায়, কাবুল দত্ত, বাবলি দত্ত প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

Spread the News
error: Content is protected !!