ট্রেডিং কেলেঙ্কারি মামলার অভিযুক্ত শাকিল ও রাজদীপ ফের গ্রেফতার

বরাক তরঙ্গ, ৭ আগস্ট : শ্রীভূমি জেলার বহু চর্চিত ৪০০ কোটি টাকার ট্রেডিং কেলেঙ্কারি মামলার দুই অভিযুক্ত শাকিল আহমদ ও রাজদীপ দেবকে শ্রীভূমি পুলিশ ফের আটক করেছে। বুধবার তাদের অন্য একটি অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এদিন ভোরবেলা তাদের বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারের পর তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে শাকিল ও রাজদীপকে ট্রেডিং কেলেঙ্কারি মামলার এক অভিযোগকারী কার্তিক দে-র দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে শ্রীভূমি পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিল। গত ২০ মার্চ দুলিয়াজান এলাকা থেকে শাকিল আহমদ এবং ৩ এপ্রিল ত্রিপুরার চুরাইবাড়ি থেকে রাজদীপ দেবকে ধরা হয়। তারা দু’জনেই তখন শ্রীভূমির ৪০০ কোটি টাকার ট্রেডিং কেলেঙ্কারির মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল। তবে সেই মামলায় দু’জনই আদালতের থেকে জামিন পেয়ে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। তদন্তে স্থবিরতা দেখা দিলেও নতুন করে আরও একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ফের গ্রেফতার করল শ্রীভূমি পুলিশ। এইবার সুজিত সেনগুপ্ত নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

সুজিত সেনগুপ্তের অভিযোগ অনুসারে, অভিযুক্ত শাকিল আহমদ ও রাজদীপ দেব তাদের ট্রেডিং সংস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের থেকে বড় অংকের বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তা বাজারে লগ্নি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেয়নি। বরং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। সুজিতবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুরনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলার বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, এই মামলায় আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির নাম জড়িয়ে পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই তদন্তের স্বার্থে আরও কয়েকজনকে জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, শ্রীভূমি জেলার এই ট্রেডিং কেলেঙ্কারি কেসটি নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষদিকে ধীরে ধীরে এই প্রতারণা কাণ্ড সামনে আসে, যেখানে একাধিক সাধারণ বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির একাধিক ধারায় মামলা চলছে। পুলিশের মতে, তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই চক্রের মূল কাণ্ডারীদেরও শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। আপাতত আদালতের নির্দেশে দুই অভিযুক্ত শাকিল আহমদ ও রাজদীপ দেবকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তাদের থেকে অর্থ আত্মসাতের নতুন তথ্য পাওয়ার জন্য টানা জেরা চালাবে বলে জানা গেছে। বরাক উপত্যকায় এক বৃহৎ ট্রেডিং কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়। এই কেলেঙ্কারিতে শাকিল আহমেদ ও তার চক্র প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

ট্রেডিং ও বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে পরবর্তীতে আত্মগোপন করেছিল। অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সে বহু মানুষকে প্রতারণা করেছিল। কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ ফেরত না পেয়ে প্রতারিত হলেও মামলা করেননি। পরে পুলিশের নজরে বিষয়টি আসার পর শ্রীভূমি পুলিশ ৪৪/২০২৫ নম্বরে একটি স্ব-মটো মামলা রুজু করে তদন্ত আরম্ভ করে। যদিও কিছুদিন পর একজন ভুক্তভোগী বদরপুর থানায় ১৩ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে ৪৮/২৫ নম্বরে একটি এজাহার দায়ের করেন। অবশেষে গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় আগে শাকিল আহমদ ও রাজদীপ দেবকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরে তারা জামিন মুক্ত হয়ে যায়। বুধবার অন্য এক মামলার ভিত্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে পরবর্তীতে আদালতে হাজির করে এবং রিমান্ডে নেয়।

Spread the News
error: Content is protected !!