জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেবা হি সমর্পণ সপ্তাহের তৃতীয় দিনে বিশাল বৃক্ষরোপণ অভিযান
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ সেপ্টেম্বর : “সেবা হি সমর্পণ, সেবা সপ্তাহ” উপলক্ষে কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার এক মহত্ বৃক্ষরোপণ অভিযান সম্পন্ন হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে জেলার ১,০০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে রোপণ করা হয় ৭৫ হাজার চারাগাছ, যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সমগ্র আসামে। মূল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় শিলচরের গভর্নমেন্ট গার্লস’ হায়ার সেকেন্ডারি অ্যান্ড মাল্টি পারপাস স্কুলে, যেখানে রাজ্যসভার সদস্য কণাদ পুরকায়স্থ ও কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব একত্রে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন। তাঁদের হাতে চারারোপণ কেবল প্রতীকী দৃষ্টান্ত নয়, বরং ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে পরিবেশ রক্ষার তাত্পর্যপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (টেরিটোরিয়াল), কাছাড়, পালভে বিজয় ত্রিম্বক, সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত জেলা মিশন সমন্বয়ক, বহ্নিখা চেতিয়া, জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক গণেশ হরিজন প্রমুখ। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কর্মসূচিকে উৎসবমুখর রূপ দেয়।
কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব সমাবেশে বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি কর্মসূচি জনগণের কল্যাণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিকল্পিত। বৃক্ষরোপণ কেবল চারা লাগানো নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য এক নিরাপদ বিনিয়োগ। আগামী প্রজন্মের জন্য যদি এখনই পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি না হয় তবে তাদের জন্য আমরা এক কঠিন সংকট রেখে যাব। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বিদ্যালয়গুলো কেবল চারাগাছ রোপণ করেই থেমে থাকবে না, বরং নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে এগুলিকে বড় করে তুলবে। তাঁর মতে, এই উদ্যোগকে বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত করা গেলে কাছাড় জেলাই নয়, সমগ্র আসাম উপকৃত হবে।
রাজ্যসভার শিলচরের সাংসদ, কণাদ পুরকায়স্থ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে কাছাড় তথা অসমের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আজ যে চারাগুলি রোপণ করা হচ্ছে তা আগামী দিনে সন্তানদের জন্য আশ্রয়, অক্সিজেন এবং সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলবে। বৃক্ষ কেবল ছায়া দেয় না, এটি জীবন দেয়। তাই প্রতিটি চারাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও সবার। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের হাতে আজ চারা তুলে দেওয়া হচ্ছে, এগুলি আগামী দিনে তোমাদের সঙ্গেই বেড়ে উঠবে। এগুলি তোমাদের স্বপ্নের প্রতীক যেমন স্বপ্নকে যত্নে লালন করো, তেমনই এগুলিকে বড় করতে হবে। এর মাধ্যমে চরিত্রে দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে।
তিনি জেলা প্রশাসনের দূরদর্শী পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেন, মৃদুল যাদবের নেতৃত্বে কাছাড় জেলা প্রশাসন সত্যিই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এত বৃহৎ আকারে বৃক্ষরোপণ অভিযান কেবল পরিবেশ নয়, সমাজকেও রক্ষা করবে। প্রশাসনের এই উদ্যোগ সমগ্র অঞ্চলের জন্য গর্বের, এবং তরুণ প্রজন্মকে সবুজ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে।
উল্লেখযোগ্য যে, “সেবা হি সমর্পণ, সেবা সপ্তাহ” এর অঙ্গ হিসেবে কাছাড় জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৭৫টি করে চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। ফলে এই কর্মসূচি আসামের সবুজ আন্দোলনের এক মাইলফলক হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন এই মহত্ উদ্যোগ সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে। “সেবা হি সমর্পণ, সেবা সপ্তাহের” তৃতীয় দিনের এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সেবার চেতনা, দায়িত্ববোধ ও জনঅংশগ্রহণকে আরও সুদৃঢ় করে তুলেছে।