সলগই হাইস্কুলে হিন্দি দিবস উদযাপন
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৫ সেপ্টম্বর : যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হল হিন্দি দিবস। রবিবার সকাল থেকে রাত অবধি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সলগই হাইস্কুল প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। সকাল থেকে টিপটিপে বৃষ্টিও থামাতে পারেনি উৎসবের উচ্ছ্বাস। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে দিনটি এক স্মরণীয় আবহ সৃষ্টি করে।
আনুষ্ঠানিক সূচনা মোতাবিক সকাল নয়টায় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে হিন্দি দিবস উদযাপন সমিতির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটির শুভারম্ভ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি শঙ্করপ্রসাদ লোহার, সহ সভাপতি ব্রীজেশকুমার রায়, মহাসচিব শিবনারায়ণ পাশি, সলগই হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সোমেন ভট্টাচার্য সহ আরও অনেকে। সকাল সাড়ে নয়টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর স্কুলের প্রধানশিক্ষক স্বাগত বক্তব্যে সকলকে শুভেচ্ছা জানান এবং হিন্দি ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
উদ্বোধনী সংগীত ও ভারত দেশ হ্যাঁ মেরা”-এর সুরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে সলগই হাইস্কুলের ছাত্রী পূজা সিনহা, সুচিত্রা আচার্য, সুইটি সিনহা, রীনা বৈদ্য ও কবিতা সিনহা দর্শকদের মুগ্ধ করেন। অনুষ্ঠানের অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেয় ছাত্রছাত্রীরা।
পরবর্তীতে মহাসচিব শিবনারায়ণ পাশি সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পাঠ করেন। এরপরে অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তব্য রাখেন মুখ্য অতিথি শ্রীভূমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার ত্রিপাঠি, পিএম শ্রী ইচাবিল হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক গোপাল রবিদাস ও শিক্ষিকা নার্গিস খাতুন। তাঁরা বলেন, “১৯৪৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তাই হিন্দি শুধু একটি ভাষাই নয়, এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। মাতৃভাষার প্রতি সম্মান রেখেই হিন্দিকে আরও প্রসারিত করা আমাদের কর্তব্য।”
হিন্দি দিবসের তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত বক্তারা তাদের বক্তব্যে স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯০ সাল থেকে লঙ্গাই ভ্যালিতে নিয়মিতভাবে হিন্দি দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। এর উদ্দেশ্য কেবল ভাষার বিকাশ নয়, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে দৃঢ় করা। তাঁদের আহ্বান, প্রবীণ প্রজন্মের সঙ্গে নবীন প্রজন্মকেও এগিয়ে আসতে হবে হিন্দির প্রচার-প্রসারের কাজে।
মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও একক নৃত্য, হিন্দি গান এবং সমবেত সংগীত পরিবেশন করে। সঙ্গীত পরিবেশনায় হারমোনিয়ামে সঙ্গ দেন শম্ভু প্রসাদ যাদব এবং তবলার তালে তালে তাল মেলান কার্তিক চন্দ। পুরো অনুষ্ঠানটি দর্শকদের এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দেয়। করতালি ও উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে স্কুল প্রাঙ্গণ।
এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৌরীশঙ্কর তেওয়ারি, শিক্ষক অভিজিত সিংহ, রাজেন গোয়ালা, কান্তাপ্রসাদ যাদব, বিন্দ্যাচল কানু, রতন কানু, গোপাল রবিদাস, রাজদীপ গোয়ালা, রামসিংহাসন কৈরি, সুরেন্দ্র গোয়ালা, রামচন্দ্র গোয়ালা, ধ্রুব সিনহা, মনোজ কৈরি, রাজেন্দ্র গোয়ালা প্রমুখ। তাঁদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সভাপতি শঙ্কর প্রসাদ লোহার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, “ভাষার মধ্য দিয়েই সংস্কৃতি ও ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আজকের অনুষ্ঠান সেই লক্ষ্য পূরণেরই এক দৃষ্টান্ত।” দিনভর কর্মসূচি পরিচালনা করেন রাজেন গোয়ালা।