হাইলাকান্দিতে আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদের ভূপেন স্মরণ
বরাক তরঙ্গ, ৭ সেপ্টেম্বর : আগামীকাল গোটা রাজ্যের সঙ্গে হাইলাকান্দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় শ্রীকৃষ্ণ সারদা কলেজে ড. ভূপেন হাজরিকা স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আর তার আগে হাইলাকান্দিতে ড. ভূপেন হাজরিকাকে স্মরণ করলো অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদ। এদিন সন্ধ্যায় হাইলাকান্দিতে ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করে অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদ। শহরের কালীবাড়ি রোডের সুষমা উৎসব ভবনে প্রবীণ নাগরিক তথা সাংস্কৃতিক কর্মী সুশান্ত মোহন চ্যাটার্জির পৌরোহিত্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সব বক্তাই ড. ভূপেন হাজরিকাকে অসমের সম্পদ বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর মর্মর স্পর্শী, জীবনমুখী গান কেবলমাত্র অসম নয় গোটা ভারতের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। তিনি অসমের প্রতিজন নাগরিকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। নিজে গান লেখে সেই গান পরিবেশন করতেন। অসমিয়া, বাংলা হিন্দি, গারো সহ অন্যান্য ভাষায় গান রচনা করে গান গেয়ে বিশ্ব জয় করেছিলেন হাজরিকা। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গুয়াহাটি আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়ে হেরে গেলেও তিনি সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। একসময় অসম বিধানসভার সদস্য। ছিলেন তিনি। ড. ভূপেন হাজরিকার মতো একজন সঙ্গীত শিল্পী অসমে জন্ম নেওয়া সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। বক্তারা বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্ম শতবর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে গোটা রাজ্যে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ড. ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। অসমের প্রতিটি জেলায় ড. ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করা হবে। বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকার, বিভিন্ন সংগঠন তাঁকে স্মরণ করবে। তিনি অসমিয়া বাঙালির মিলনের সেতু তৈরি করে গিয়েছেন গানের মাধ্যমে। আশির দশকে অসমে বাঙালি খেদা শুরু হলে “মানুষ মানুষের জন্য” গান গেয়ে হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেন বক্তারা।
শুরুতে অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদের রাজ্যিক সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য কুমার নাথ উদ্যেশ্যে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদ ২০২৩ সালে গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছে। সুধাকণ্ঠ ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজরিকা ৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। আর ওইদিন থেকে গোটা অসমে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অসম সরকার ৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করবে। ফলে একদিন আগে ৭ সেপ্টেম্বর অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদ সারা রাজ্যে ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। আর পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে রবিবার হাইলাকান্দিতে ড. ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠান হচ্ছে। রাজ্য সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য কুমার নাথ বলেন, বরাক উপত্যকার তিন জেলায় অসম আবৃত্তি ও সংস্কৃতি পরিষদের জেলা কমিটি শীঘ্রই গঠন করা হবে। অনুষ্ঠানে ডঃ ভূপেন হাজারিকার মানুষ মানুষের জন্য ও গঙ্গা আমার মা… এই দুটি গান গেয়ে শোনান সংস্কৃতিকর্মী শঙ্কর চৌধুরী। দোলা হে দোলা গান গেয়ে শোনান গৌতম গুপ্ত। তবে শঙ্কর চৌধুরী পরিবেশিত মানুষ মানুষের জন্য গানটি উপস্থিত সবাই একসঙ্গে গেয়ে শোনালে অনুষ্ঠানের পৃথক মাত্রা এনে দেয়।
পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য কুমার নাথের পরিচালনায় ডঃ ভূপেন হাজরিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সুশান্তমোহন চ্যাটার্জি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্বপন পাল, সাংস্কৃতিক মহাসভার হাইলাকান্দি জেলা সম্পাদক অভ্রাংশু চৌধুরী, অসম সাহিত্য সভার জেলা সভাপতি মনোজকান্তি দাস, কবি রফি আহমদ, প্রবীণ নাগরিক সংস্থার জেলা সভাপতি ড. নারায়ণ দেবনাথ, বিদ্যালয় সমূহের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক সুনীলকুমার শর্মা, কবি সাহিত্যিক রবীন্দ্র নাথ কাশ্যপ, প্রবীণ নাগরিক বিধুভূষণ দাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন ড্রিমস ও সাংস্কৃতিক মহাসভার হাইলাকান্দির সভাপতি গৌতম গুপ্ত, আমি আদমি পার্টির সভাপতি অপু পাল। শুরুতে ড. ভূপেন হাজরিকার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন উপস্থিত ব্যক্তিরা। সবশেষে সবার কণ্ঠে মানুষ মানুষের জন্য গান গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে, জেলা শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকেও প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় সুধা কণ্ঠের শততম জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধনী কার্যক্রম আয়োজন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।