হাতিখিরা বাগানে পুজোর খুশির হাওয়া, অবশেষে ঘোষিত বোনাস
চার ক্যাটাগরিতে বণ্টন, উপকৃত হবেন প্রায় ১২০০ শ্রমিক
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ সেপ্টেম্বর : অবশেষে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা, টানাপোড়েন আর প্রতীক্ষার অবসান ঘটল পাথারকান্দির লোয়াইরপোয়া ব্লকের অন্তর্গত হাতিখিরা বেসরকারি চা-বাগানে কর্মরত নিয়মিত শ্রমিকদের। ঘোষিত হলো দুর্গাপূজা বোনাস। আসন্ন উৎসবের প্রাক-মুহূর্তে বাগান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে খুশির স্রোত বইতে শুরু করেছে শ্রমিক মহলে। জানা গেছে, মোট চারটি বিভাগে ভাগ করে বোনাস প্রদান করা হবে, যা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অনিশ্চয়তার মেঘ কাটিয়ে হাতিখিরা চা-বাগানের প্রায় বারোশো শ্রমিকের মুখে ফুটল স্বস্তির হাসি। দুর্গাপূজা বোনাস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিল বাগান কর্তৃপক্ষ।প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ সাম্প্রতিক এক বৈঠকে হাতিখিরা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ এবং চারটি ডিভিশনের বাগান পঞ্চায়েত কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এ বছরও বোনাস প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি জয়চাঁদ গোয়ালা ও সম্পাদক নিতাই তাঁতী জানান, শ্রমিকদের পরিশ্রমকে স্বীকৃতি জানিয়েই এই বোনাস কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবার শ্রমিকদের কাজের দিনের ভিত্তিতে চার ভাগে বোনাস প্রদান করা হবে।বছরে ২৫১ দিনের বেশি কাজ করা শ্রমিকরা পাবেন ১৪% বোনাস। ২০১ থেকে ২৫০ দিন কাজ করলে মিলবে ১২% বোনাস।১৫১ থেকে ২০০ দিনের শ্রমিকরা পাবেন ১০% বোনাস।আর ১৫০ দিন পর্যন্ত কাজ করা শ্রমিকরা পাবেন ৮.৩৩% বোনাস।
সব মিলিয়ে প্রায় ১২০০ শ্রমিক উপকৃত হবেন এই সিদ্ধান্তে। পুরো বছর কাজ করা শ্রমিকরা সর্বাধিক সাড়ে সাত হাজার টাকার মতো বোনাস হাতে পাবেন বলে জানা গেছে।
বোনাস ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাতিখিরা চা-বাগানে খুশির স্রোত বইতে শুরু করেছে। শ্রমিকদের কেউ কেউ জানান, দুর্গাপূজা মানেই বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। এই সময়ে যদি বোনাস না মেলে, তবে আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু এবার সময়মতো সিদ্ধান্ত হওয়ায় আমরা খুব খুশি।’
একজন মহিলা শ্রমিকের কথায়, এই টাকাতেই সন্তানদের নতুন জামাকাপড়, বাড়ির বাজার আর পূজোর সাজসজ্জার খরচ মেটে। উৎসবের আনন্দ এখন সত্যিই দ্বিগুণ হবে।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে শ্রমিকদের হাতে বোনাস পৌঁছালে এলাকাজুড়ে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতেও বেড়ে যায় কেনাকাটার ভিড়। এ বছরও বোনাস ঘোষণার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ফলে কেবল শ্রমিক পরিবার নয়, গোটা অঞ্চলের অর্থনীতিই চাঙ্গা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি জয়চাঁদ গোয়ালা বলেন, শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটলেই আমাদের আনন্দ। পুজোর আগে বোনাস হাতে পাওয়ায় প্রতিটি পরিবারে খুশির আলো ছড়িয়ে পড়বে।’’ সম্পাদক নিতাই তাঁতীও জানান, ‘‘আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেই বোনাস দেওয়া হবে। এবারের পূজোও শ্রমিক পরিবারগুলির কাছে বিশেষ আনন্দের হয়ে উঠবে বলে আমরা আশা করি।
এদিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেই বোনাস হাতে পাবেন শ্রমিকরা এমন আশ্বাসে ইতিমধ্যেই হাতিখিরা চা-বাগানে উৎসবের আগাম আবহ তৈরি হয়েছে। মাঠে-ঘাটে, শ্রমিক লাইনে আজ যেন একটু ভিন্নরকম আলো। কারও মনে নতুন জামাকাপড় কেনার পরিকল্পনা, কেউ আবার ভেবে রেখেছেন সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাবেন পূজোর আনন্দে।
বাগানবাসীরা আশাবাদী এবারের পূজো শ্রমিক পরিবারগুলির জন্য হয়ে উঠবে সত্যিকারের আনন্দ, মিলন আর আশার উৎসব। দুর্গাপূজা কেবল দেবী বন্দনার উৎসব নয়, এটি শ্রমিক পরিবারগুলির কাছে সারা বছরের ক্লান্তি ভুলে নতুন করে বেঁচে ওঠার সময়। আর সেই আনন্দকেই আরও উজ্জ্বল করে তুলল হাতিখিরা বাগানে ঘোষিত এই পূজা বোনাস।