কাছাড়ে বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনা ও নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মুখ্য সচিব রবি কোটা
জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৩ জুলাই : “বরাক উপত্যকার ভবিষ্যৎই আমাদের অগ্রাধিকার এবং অসম সরকারের প্রতিটি প্রচেষ্টা সেই লক্ষ্যেই পরিচালিত,” — রবিবার কাছাড় জেলায় এক সফরের সময় এভাবেই আশ্বাস দিলেন অসম সরকারের মুখ্য সচিব ড. রবি কোটা। চার দিনের বরাক সফরের অংশ হিসেবে তিনি শ্রীভূমি ও হাইলাকান্দি পরিদর্শনের পর এদিন শিলচরে পৌঁছে ব্যস্ত দিনটি কাটান নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প পর্যালোচনা, আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক ও নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে। তাঁর সফর রাজ্য সরকারের বরাক উপত্যকায় দ্রুত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করল।
দিনটি শুরু হয় জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে এক বিস্তৃত পর্যালোচনা বৈঠক দিয়ে। কোটার নেতৃত্বে বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে বরাক উপত্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটানো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করেন চার লেনের শিলচর–ভাইরেংতে করিডর, পাঁচগ্রাম চার লেন বাইপাস এবং বহুল প্রতীক্ষিত বদরপুর বাইপাসের অগ্রগতি, যা ২০২৬ সালের আগস্টের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। ক্যাপিটাল পয়েন্ট থেকে রাঙ্গিরখাড়ি সড়ক এবং একটি বেইলি সেতু নির্মাণের অগ্রগতিও তিনি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এনএইচআইডিসিএল কর্মকর্তাদের সমস্ত অন্তরায় দূর করতে এবং অনাবশ্যক বিলম্ব এড়াতে নির্দেশ দেন।

মানবসম্পদ উন্নয়নের দুই স্তম্ভ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই পর্যালোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়। কোটা সোনাইয়ে নতুন মহিলা কলেজ ও আবাসিক বিদ্যালয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হন যে বিদ্যুৎ, পানীয়জল ও আসবাবপত্রের মতো প্রয়োজনীয় সুবিধা ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশের আগে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে। চা-বাগান মডেল স্কুলগুলির অবস্থাও তিনি পর্যালোচনা করেন, যা চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রেও তিনি নজর দেন। শিলচরের এসএম দেব সিভিল হাসপাতালে ৫০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লকের কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং শিলচর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার ইমারজেন্সি হাসপাতাল প্রকল্পের কাজেও দ্রুততা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য, আবগারি, কৃষি, শিক্ষা প্রভৃতি দপ্তরের চলতি ও পরিকল্পিত প্রকল্পগুলির সাম্প্রতিক অগ্রগতির খতিয়ান শুনে তিনি তাদের সমন্বিতভাবে ও ফলপ্রসূভাবে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেন।

এরপর তিনি যান জেলা আয়ুক্তের পুরনো সম্মেলন কক্ষে , যেখানে কাছাড়ের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রবীণ সমাজকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এক খোলামেলা মতবিনিময় করেন। তিনি দীর্ঘ বক্তব্যে বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নে অসম সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানান, যা শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবের মাটিতেও স্পষ্ট হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে গুয়াহাটি–শিলচর হাই স্পিড করিডোর, রেলপথ উন্নয়ন ও উপত্যকার প্রয়োজন অনুযায়ী নানা সড়ক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প বরাকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। তাঁর আশ্বাসে বরাকবাসীর কাছে পৌঁছাল এক শক্ত বার্তা তাঁদের চাহিদা ও উদ্বেগ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং অদূর ভবিষ্যতেই তার ফলও তারা দেখবেন। রবি কোটার সফর রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতি জবাবদিহিতা, অন্তর্ভুক্তি ও সক্রিয়তার স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিল বরাকের মানুষের কাছে। তাঁর বিস্তারিত পর্যালোচনা ও আন্তরিক সংলাপে প্রতিফলিত হল প্রশাসনের সেই প্রতিশ্রুতি বরাক উপত্যকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নের ফল যেন সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করতে পারেন তা নিশ্চিত করা।