পাথারকান্দি বিধানসভা ভিত্তিক গ্রীষ্মকালীন কর্মশালা সম্পন্ন
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ জুলাই : অসম সরকারের সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের অধীন শ্রীভূমি জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাথারকান্দি বিধানসভা কেন্দ্র ভিত্তিক গ্রীষ্মকালীন সাংস্কৃতিক কর্মশালা এক জাঁকজমকপূর্ণ সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হল। শ্রাবণের প্রখর রোদ ও দাবদাহ উপেক্ষা করে, এই দিনটি রঙে, সুরে ও নৃত্যে হয়ে উঠেছিল এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা। বৃহস্পতিবার পাথারকান্দি হলি চিলড্রেন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই পনেরো দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছিল বহু বিশিষ্টজনের উপস্থিতি ও হৃদয়গ্রাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সংস্কৃতি পরিষদের প্রতাপগড় আঞ্চলিক কমিটির সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল নবীন প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃতি, শিল্প ও ঐতিহ্যের বীজ রোপণ করা।
অনুষ্ঠানের স্বাগতিক বক্তব্যে কমিটির সভাপতি হরিনারায়ণ সিনহা কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, এই কর্মশালা শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুশীলনই নয়, বরং আগামী প্রজন্মের শিল্পীসত্তাকে জাগিয়ে তোলার এক সৃজনশীল প্রয়াস।অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা কর্মশালার প্রশংসা করে বলেন, এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিভা জেলা ও রাজ্য স্তরে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। প্রশিক্ষকদের অধ্যবসায় ও নিষ্ঠাই এই সফলতার মূল চাবিকাঠি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঙ্গীত প্রশিক্ষিকা সুজাতা সিনহার নেতৃত্বে প্রশিক্ষণার্থীদের একটি সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবলায় সঙ্গত করেন কঙ্কন ভট্টাচার্য, যিনি তাঁর নিপুণ তালরচনায় পরিবেশনাটিকে আরো জীবন্ত করে তোলেন।এরপর একে একে অতিথিদের মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। মঞ্চ অলঙ্কৃত হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে। প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থাপনায় নাটক, নৃত্য, সংগীত ও যোগব্যায়ামের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনা উপস্থাপিত হয়, যা দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেয়।
এই কর্মশালার প্রধান প্রশিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন নাট্য প্রশিক্ষক অমরজিৎ সরকার, যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক পঙ্কজ দেব, নৃত্য প্রশিক্ষিকা তানিয়া মণ্ডল, সঙ্গীত প্রশিক্ষিকা সুজাতা সিনহা তাঁদের প্রত্যেককে অসম সরকারের পক্ষ থেকে শংসাপত্র ও ঐতিহ্যবাহী গামছা দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় তাঁদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের হাত দিয়ে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে অসম সরকারের করিমগঞ্জ জেলাশাসকের স্বাক্ষরযুক্ত শংসাপত্র প্রদান করা হয়, যা তাঁদের ভবিষ্যতের পথ চলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হয়ে থাকবে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন—গ্রীষ্মকালীন কর্মশালা পরিচালনা কমিটির মুখ্য পৃষ্ঠপোষক শান্তিলাল সিংহা বশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিদ্ধার্থ শেখর পাল চৌধুরী শিক্ষাবিদ এএস হোসেন আহমদ, স্বামী বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যাপক ময়নুল হক, হলি চিলড্রেন স্কুলের অধ্যক্ষ প্রশান্ত রাজকুমার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন রূপশ্রী কর। এই কর্মশালা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সরকার ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগে গ্রামীণ ও আধা শহরাঞ্চলের প্রতিভাগুলিকেও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এক নতুন দিশা দেখানো সম্ভব। স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশে এই উদ্যোগ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হবে।