গোমাতাকে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি রাজস্থানের কেন্দ্রীয় বৈঠকে, জানালেন পঙ্কজ শ্যাম
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১১ অক্টোবর : ভারতীয় বংশোদ্ভূত গোমাতাকে জাতীয় ঐতিহ্য এবং গোপাষ্টমী উৎসবকে জাতীয় উৎসব হিসাবে ঘোষণার জন্য জোরালো দাবি জানালো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সম্প্রতি রাজস্থানের জয়পুরের প্রতাপনগরস্থিত “স্বামী লীলা শাহ ভবনে” বিশ্ব হিন্দুপরিষদ, গোরক্ষা বিভাগের তিনদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় বৈঠক সেরে শনিবার পাথারকান্দিতে এসে দক্ষিণ পূর্ব অসম প্রান্তের গোরক্ষা প্রমুখ পঙ্কজ শ্যাম নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একথা বলেন। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা সংগঠনের কেন্দ্রীয় পদাধীকারী, কেন্দ্রীয় গোরক্ষা ট্রাষ্টের পদাধীকারী, ক্ষেত্রীয় পদাধীকারী ছাড়া ও দেশের ৪০টি প্রান্তের গোরক্ষা প্রমুখ, সহ-প্রমুখ এবং প্রান্তীয় ট্রাস্ট্রের পদাধীকারী সহ মোট ১৬৭জন দায়িত্ববান কর্মীদের উপস্থিতিতে তিন দিবসীয় বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, তিন দিবসীয় বৈঠকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত গাই এবং বিদেশী প্রযুক্তির (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের জার্সি গাই সহ পাশ্চাত্যের কৃত্রিম গাভীর বংশজ) গাভীর মধ্যে যে আকাশ পাতাল ব্যবধান তা সভায় বিশদভাবে তুলে ধরেন সংগঠনের বিভিন্ন বক্তারা। দেশীয় বংশোদ্ভূত গাভী থেকে প্রাপ্ত দুগ্ধ কেন অমৃততুল্য, গোবর এবং গো-মূত্র কেন অতি মূল্যবান সম্পদ তা বিশদভাবে তুলে ধরেন তাঁরা। বলেন, ভারতীয় গোবংশ কেবলমাত্র হাজার বছরের ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক নয়, সঙ্গে স্বদেশী অর্থনীতিকে মজবুত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সমর্থ।
দ্বিতীয় দিনের সভায়ও একই সুর প্রতিধ্বনিত হয় বলে পঙ্কজ শ্যাম জানান। তিনি বলেন, প্রথম দিন বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব, গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ,কর্ণাটক আদি রাজ্যের গোবিভাগের কেন্দ্র, ক্ষেত্র তথা প্রান্তীয় ট্রাস্টের পদাধিকারী তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পপতিরা এ সম্বন্ধে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
একইভাবে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে
প্রতিটি রাজ্যের প্রান্ত প্রমুখদের বক্তব্যের ফাঁকে দক্ষিণ পূর্ব আসাম প্রান্তের গোরক্ষা প্রমূখ হিসেবে পংকজ শ্যাম নিজ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, বিগত বকরা ঈদের সময় থেকে গোমাতাদের উপর অত্যাচার ব্যাপক হারে কমে এসেছে তার উল্লেখ করার পাশাপাশি এক্ষেত্রে নিজ সংগঠনের সক্রিয় ভূমিকা পালনের ও কৃতিত্ব দেন। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে স্বীকার করেন। তবে এদিন তিনি তার বক্তব্যে ইদানীংকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে “ফ্রেশ ফ্রজেন বাফেলো মিট” এর আড়ালে গোমাংস বিক্রির কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন। এনিয়ে তিনি সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশ্ব হিন্দুপরিষদের তিন দিবসীয় কেন্দ্রীয় বৈঠকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত গোমাতাকে জাতীয় ঐতিহ্য এবং গোপাষ্টমী উৎসবকে জাতীয় উৎসব হিসাবে ঘোষণার জন্য বিভিন্ন বক্তা জোরালো দাবি জানান।
কেন্দ্রীয় গোবিভাগের বিধি প্রকোষ্ঠের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এদিনের সভায় অবৈধ গো পাচার সম্বন্ধীয় বিভিন্ন কঠোর আইন বলবৎ করার জন্য নুতন নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে বলে জানান। এনিয়ে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। বিভিন্ন গুণাবলীর নিরিখে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ যেহেতু ভারতীয় গাভী মাতা বলে সম্বোধন করেন তাই তিনি গোমাতাকে জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক এবং গোপাষ্টমীকে জাতীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানান। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়।তৃতীয় তথা শেষদিনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীনেশ উপাধ্যায়জী কিভাবে সংগঠনকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছানো যায় তার উপর বিশদ আলোচনা করেন। শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় প্রভারী হুকুম চাঁদ শাওলাজি ভারতীয় নারী সমাজের সঙ্গে ভারতীয় গোমাতাদের গর্ভ ধারণের সময়সীমা তথা প্রসব প্রক্রিয়ার সামঞ্জস্যতা তুলে ধরে গাভীকে মাতা বলে সম্বোধন করার যথার্থতা তুলে ধরেন।